জুয়েল রানার দেহ আসার পরে শোকগ্রস্ত পরিবার। — নিজস্ব চিত্র।
দেহ গ্রামে পৌঁছতেই উঠল শাস্তির দাবি। শুক্রবার সকালে ওড়িশায় সম্বলপুরের গ্রামে গণপ্রহারে নিহত পরিযায়ী শ্রমিক জুয়েল রানার (২১) দেহ মুর্শিদাবাদের সুতি ১ ব্লকের চকবাহাদুরপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছয়। প্রশ্ন ওঠে, বিশেষ নিবিড় সংশোধনের পরে খসড়া তালিকায় নাম থাকলেও, এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের কেন বাংলাদেশি বলে সন্দেহে করা হচ্ছে! ওঠে দাবি, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার চাই না, লাখ লাখ টাকার সাহায্যও চাই না, ভিন্-রাজ্যে কাজে যাওয়া স্বামী, সন্তানদের সুরক্ষা চাই।’’
জুয়েলের কাকা রিয়াকুল হকের দাবি, ‘‘যদি ধরেও নিই যে, আধার কার্ডে জালিয়াতি করা সম্ভব, তা হলেও খসড়া তালিকায় বাড়ির সবার নাম রয়েছে।জুয়েলের বয়স কম। ও ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন করেছিল। যারা ওকে এ ভাবে মারল, তাদের চরম শাস্তি হোক।’’ ওড়িশায় জুয়েলদের পাশের ঘরেই থাকতেন নুরপুরের পল্টু শেখ-সহ চার জন। পল্টুও বলেন, ‘‘আমার নামও খসড়া তালিকায় রয়েছে।’’ রিয়াকুল বলেন, ‘‘আমরা যে ভারতীয়, তার আর কী প্রমাণ হতে পারে!’’
জুয়েল রানার দেহ এল গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
একই প্রশ্ন করেছেন মালদহের বৈষ্ণবনগরের হেমন্ত মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা আকিউর রহমানের বাবা আমির হোসেন। আকিউরকেও বুধবার প্রচণ্ড মারধর করা হয়। আকিউরের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে। এসআইআর-এর খসড়া তালিকাতেও রয়েছে। আমির হোসেন বলেন, “বংশানুক্রমে এ দেশে বাস করছি। সে তথ্যও রয়েছে। তার পরেও নিজেদের দেশেই বাংলাদেশি সন্দেহে মার খেতে হচ্ছে।’’ রঘুনাথগঞ্জ থেকে নির্বাচিত রাজ্যের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামানও বলেন, ‘‘এসআইআর-এ নাম তোলার তা হলে মানে কী?’’
সূত্রের খবর, জুয়েলের দেহ আসার জন্য শোকাচ্ছন্ন পরিবারের পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার রাত জেগেছে প্রায় গোটা গ্রাম। এলাকার অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করেন। তাই জুয়েলের মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে ঘরে-ঘরে।
জুয়েলের দুই আহত সঙ্গী আকিউর এবং সানোয়ার হোসেন ওরফে পলাশও ফিরছেন। ঠিকাদার সাদ্দাম শেখ তাঁদের নিয়ে আসছেন। সাদ্দাম বলেন, “আর থাকার ভরসা পেলাম না।’’ শুক্রবার সন্ধেতেই ফেরার ট্রেন ধরেছেন পল্টু শেখ, আলমগির শেখ, শাহ আলম-সহ চার জন। পল্টু বলেন, ‘‘ওড়িশায় কাজ আছে, মজুরি ভাল। তার উপরে বাড়ি থেকে কেরলের তুলনায় কাছে। তাই ওখানেই যেতাম। কিন্তু এখন আর ভরসা পাচ্ছি না।’’ রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘শ্রমশ্রী প্রকল্পের সাহায্যের আওতায় আনা হবে ওঁদের। কিছু কাজের ব্যবস্থাও হচ্ছে।’’
জুয়েলকে পিটিয়ে খুনে অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তি এবং নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এক কোটি, জখম শ্রমিকদের ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ওড়িশা সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে সিটু অনুমোদিত ‘কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’ (সিডব্লিউএফআই)। জুয়েল-হত্যার প্রতিবাদে এ দিন সন্ধ্যায় লোকভবনের (সাবেক রাজভবন) কাছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে মোমবাতি মিছিল হয়েছে।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে