কীর্ণাহারের করিমই কি খাগড়াগড়ে হত সুবহান

সুবহান শেখ নয়। স্বপন মণ্ডলও নয়। অষ্টমীর দুপুরে খাগড়াগড় বিস্ফোরণে শাকিল গাজি ছাড়া নিহত দ্বিতীয় জনআসলে আবদুল করিম বলে একটি সূত্রে জেনেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। সোমবার রাতে এই তথ্য গোয়েন্দারা জেনেছেন। তাঁদের দাবি, এই বঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নয়, বাংলাদেশেরও কোনও জেলাও নয়, করিমের বাড়ি আসলে বীরভূমের কীর্ণাহারের কাছে কাফেরপুর গ্রামে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস ও অর্ঘ্য ঘোষ

কলকাতা ও কীর্ণাহার শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩
Share:

সুবহান শেখ নয়। স্বপন মণ্ডলও নয়। অষ্টমীর দুপুরে খাগড়াগড় বিস্ফোরণে শাকিল গাজি ছাড়া নিহত দ্বিতীয় জনআসলে আবদুল করিম বলে একটি সূত্রে জেনেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

Advertisement

সোমবার রাতে এই তথ্য গোয়েন্দারা জেনেছেন। তাঁদের দাবি, এই বঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নয়, বাংলাদেশেরও কোনও জেলাও নয়, করিমের বাড়ি আসলে বীরভূমের কীর্ণাহারের কাছে কাফেরপুর গ্রামে। অথচ বছর চব্বিশের ওই যুবকই মৃত্যুর কিছু ক্ষণ আগে নিজের নাম স্বপন মণ্ডল, বাবার নাম দীপক মণ্ডল ও বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তরপাড়া গ্রামে জানিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কী বিভ্রান্তই না করেছিল!

এনআইএ সূত্রের খবর, খাগড়াগড় কাণ্ডের তদন্তে গোয়েন্দারা বীরভূমের কয়েকটি যোগসূত্র পান। কয়েক দিন ধরে এনআইএ-র একটি দল বীরভূমেই পড়ে ছিল। কীর্ণাহারে কিছু যোগাযোগ তৈরি করে এনআইএ। সোমবার কীর্ণাহারের আমজাদ আলি শেখকে গ্রেফতার করা সেই খাটনিরই ফসল বলে এনআইএ-র বক্তব্য। সোমবার রাতে বীরভূমেরই একটি ‘সোর্স’ থেকে এনআইএ জানতে পারে, কীর্ণাহার থেকে করিম নামে এক যুবক দু’-আড়াই মাস ধরে বেপাত্তা। ওই ‘সোর্স’-ই নিহত সুবহানের ছবি দেখে তাকে করিম বলে চিহ্নিত করে। কিন্তু কীর্ণাহারের কোথায় করিমের বাড়ি? এই ব্যাপারে এনআইএ-কে সাহায্য করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)।

Advertisement

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকে বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের বিভিন্ন এলাকায় সন্দেহজনক ভাবে যারা নিখোঁজ বা পলাতক, তাদের সন্ধানে আইবি-ও কাজ করছে। আইবি-র কাছ থেকে এনআইএ জানতে পারে, করিমের বাড়ি কীর্ণাহারের কাফেরপুরে, তার বাবা জামশেদ শেখ কীর্ণাহার বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী। এনআইএ-র বক্তব্য, খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহত দ্বিতীয় ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে।

এ দিন কাফেরপুর গ্রামে সাংবাদিক ঢুকতেই রে রে করে তেড়ে আসেন একদল মহিলা ও পুরুষ। করিমের মা নুরজাহান বিবি জানিয়েছেন, তাঁর ছোট ছেলে করিম শেখ আড়াই মাস আগে কেরলে চামড়ার কারখানায় কাজ করতে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে এবং তার পর থেকে তার সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ নেই।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহত দ্বিতীয় ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে তদন্তকারীরা এত দিন হিমশিম খেয়েছেন। ওই যুবকের জবানবন্দি অনুযায়ী তার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তরপাড়া গ্রামে জেনে ধন্দে পড়েন গোয়েন্দারা। কারণ, পূর্ব মেদিনীপুরে ওই নামে কোনও গ্রাম নেই। শেষমেশ পুলিশ পৌঁছয় ওই জেলার উত্তরবাড় গ্রামে গোপাল মণ্ডলের বাড়িতে। গোপালবাবুর ছেলে গৌতমের খবর বেশ কিছু দিন ধরে বাড়ির লোকজন পাচ্ছিলেন না। কিন্তু সব জল্পনায় জল ঢেলে বাড়ি ফিরে আসে গৌতম।

খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃত মহিলাদের অন্যতম ও বিস্ফোরণে নিহত শাকিল গাজির স্ত্রী রাজিয়া বিবি পুলিশকে জানায়, সুবহান বাইরে থেকে এসে ওই ডেরায় ছিল এবং সে-ই সব কিছু জানত। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, ওই বয়ানের উপর ভিত্তি করেই জেলা পুলিশের রিপোর্টে সুবহানকে দলের মাথা ও বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। আবার বিস্ফোরণে জখম ও একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল হাকিম এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন এনআইএ-কে জেরায় জানায়, সুবহানের পুরো নাম সুবহান শেখ এবং সে শাকিলের তুতো ভাই ও বাংলাদেশের নাগরিক। এখন এনআইএ মনে করছে, বীরভূমের মহম্মদবাজারের দেউচার বাসিন্দা হাকিম ভাল করেই নিজের জেলার ছেলে করিমকে চিনত এবং সে গোয়েন্দাদের ভুল পথে চালিত করতে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলেছিল।

কীর্ণাহার ছাড়িয়ে নিমড়া গ্রামের ঢালাই রাস্তা ধরে মহেশগ্রাম পেরিয়েই কাফেরপুর গ্রাম। মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ সেখানে করিমের বাড়ির সামনে পৌঁছতেই হই হই করে তেড়ে এলেন এক দল মহিলা-পুরুষ। প্রশ্ন ধেয়ে এলো, “কী চাই? এখানে কেন?” প্রশ্ন করতেই মধ্যবয়স্ক এক মহিলা বলে দেন, “এখানে জামশেদ আলি বলে কেউ নেই!” তিনি একটু আড়ালে যেতেই গ্রামবাসীদের এক জন অবশ্য জানান, ওই মহিলাই জামশেদের স্ত্রী নুরজাহান বিবি।

এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়ে শরীরে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও করিম নিজের নাম, বাবার নাম, গ্রাম সব কিছু সম্পর্কে পুলিশকে মিথ্যে বলেছিল। এতেই স্পষ্ট, করিম কত কট্টর জেহাদি ছিল!”

শাহনুরের বাড়িতে তল্লাশি এনআইয়ের

নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি

বরপেটার চতলা গ্রামে জেএমবি জঙ্গি শাহনুর আলমের বাড়িতে ফের তল্লাশি চালাল এনআইএ। আজ সকালে এসপি দেবজিৎ হাজরিকার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি দল শাহনুরের বাড়িতে যান। শাহনুরের বাবা ও ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। গ্রামের প্রধান আসগর আলি, স্থানীয় এক সাংবাদিক ও এক শিক্ষককে ডেকেও জেরা করা হয়। পরে জেলার এসপির সঙ্গে বৈঠক করেন এনআইএ কর্তারা। এনআইএ সূত্রের খবর, শাহনুর ও সুজানার আরও কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছে। চতলায় তাদের ঘর থেকে কিছু নথিও মিলেছে। সুজানা তদন্তকারীদের জানিয়েছে, অসমে ছদ্মবেশে জিহাদি জেএমবি সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছে। পরে গ্রাম প্রধান আসগর বলেন, “আমার কাছে গ্রামের কয়েক জন যুবকের গতিবিধির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এলাকার কে, কোথায় যাচ্ছে তা সব সময় জানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। গ্রাম থেকে কয়েক দিন ধরে কেউ নিখোঁজ থাকলে তার নাম ও তথ্যও পুলিশকে জমা দিতে বলা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন