প্রতীকী ছবি।
কর্মরত অবস্থায় কোনও স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু হলে তাঁর জায়গায় পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার নিয়ম আছে। সম্প্রতি এমনই একটা চাকরি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মৃত এক প্রাথমিক শিক্ষকের স্ত্রী। বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, এই সব ক্ষেত্রে প্রার্থীর নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। শিক্ষকের কাজ না-হোক, তাঁকে অন্তত স্কুলের করণিক কিংবা পিয়নের চাকরি দিতেই হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের নয়াপাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র মণ্ডল খরমপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে কর্মরত অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর স্ত্রী অঞ্জনা মণ্ডল মাধ্যমিক পাশ। তিনি স্বামীর মৃত্যুর কিছু দিন পরে ‘ক্ষতি পরিপূরক চাকরি’ পেতে জেলা প্রাথমিক কাউন্সিলে আবেদন করেন। কাউন্সিল জানিয়ে দেয়, অঞ্জনাদেবীর পারিবারিক অবস্থা খুব খারাপ নয়। পরিবারে আর্থিক অনটন রয়েছে, এমনও নয়। তাই তাঁর আবেদন মঞ্জুর করা হচ্ছে না। তার পরেও বেশ কয়েক বছর ধরে জেলা প্রাথমিক কাউন্সিলে বারবার আবেদন জানান ওই মহিলা। কিন্তু আবেদন বিবেচিত হয়নি বলে অঞ্জনাদেবীর অভিযোগ। অগত্যা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
ওই মহিলার আইনজীবী এক্রামুল বারি জানান, হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ২০১১ সালে জেলা প্রাথমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়ে ওই মহিলার আবেদন পুনরায় বিবেচনা করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ পেয়ে জেলা প্রাথমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেন, ওই মহিলার চাকরির ব্যবস্থা হোক। স্কুলশিক্ষা দফতর কিন্তু চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দেয়, শিক্ষকতা করার মতো কোনও যোগ্যতাই নেই ওই প্রার্থীর।
আইনজীবী এক্রামুল জানান, স্কুলশিক্ষা দফতরের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ফের মামলা দায়ের করা হয় হাইকোর্টে। আবেদনে বলা হয়, এই ধরনের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের একটি নিয়ম আছে। তাতে বলা হয়েছে, কর্মরত অবস্থায় প্রাথমিক স্কুলের কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়া হবে। সেই প্রার্থীর স্কুলশিক্ষকতা করার নির্দিষ্ট যোগ্যতা না-থাকলে কোনও মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে তাঁকে করণিক বা পিয়নের চাকরি দেওয়া যেতে পারে। একই ভাবে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের কোনও শিক্ষকের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের প্রার্থীর প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করার যোগ্যতা থাকলে তাঁকে সেখানে শিক্ষকের চাকরি দেওয়া যেতে পারে। সেই নিয়ম মেনেই অঞ্জনাদেবীকে চাকরি দিতে পারে স্কুলশিক্ষা দফতর।