পরিবর্তনের রাজ্যে পরিবর্তনটা দেখা যাচ্ছিল কয়েক বছর ধরে। এ বার মিলল তার স্বীকৃতিও।
শিশু-মৃত্যুর হার কমিয়ে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কন্যাশ্রী’র রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। স্বাস্থ্য মন্ত্রক আয়োজিত চতুর্থ ‘ন্যাশনাল সামিট অন বেস্ট প্র্যাক্টিস অ্যান্ড ইনোভেশন ইন পাবলিক হেল্থ কেয়ার’-এ এই স্বীকৃতি ও পুরস্কার দেওয়া হয় ৬ জুলাই। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা জানান, এ ক্ষেত্রে জম্মু ও কাশ্মীরের পরেই পশ্চিমবঙ্গের স্থান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানাচ্ছে, সীমিত সময়ে শিশু-মৃত্যুর হার সব চেয়ে বেশি কমানোয় এই পুরস্কার। শিশু-মৃত্যুর হার নিয়ে শেষ সমীক্ষা হয়েছে ২০১৬ সালে। তাতে দেখা যায়, এ রাজ্যে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার আগের বছরে হিসেবটা ছিল হাজারে ৪১।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, সচেতনতাকে হাতিয়ার করে এই সাফল্য পেয়েছে রাজ্য। গর্ভবতীদের কী ভাবে যত্ন নেওয়া উচিত, কী ধরনের খাবার খেলে প্রসূতি ও গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টি হবে, সেই বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। প্রসবের পরে মা কী ভাবে শিশুর যত্ন নিচ্ছেন বা তাকে কী ধরনের খাবার খাওয়াচ্ছেন, তার উপরেও নজর রাখছেন চিকিৎসক, আশাকর্মীরা। প্রত্যন্ত এলাকায় বাড়ি বা়ড়ি ঘুরে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। হাসপাতালে প্রসবের প্রয়োজন কেন, সেটা বোঝানো হচ্ছে গ্রামবাসীদের। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা বাড়ি গিয়ে প্রসূতিদের বোঝাচ্ছেন, প্রসবের জন্য হাসপাতালে যাওয়া কেন দরকার। শেষ ছ’বছরে হাসপাতালে গিয়ে সন্তান প্রসবের হার ৬৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯২ শতাংশ।
আরও খবর
সম্প্রীতিও শেখাচ্ছে জেভিয়ার্স: মুখ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকায় পরিবহণ ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত নয়। গ্রামের প্রসূতিরা সময়ে হাসপাতালে পৌঁছতে পারেন না। রাস্তায় অস্বাস্থ্যকর ভাবে প্রসবের জেরে অনেক সময় নবজাতক মারা যায়। তাই প্রসবকালীন মৃত্যু এড়াতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ‘প্রি-ডেলিভারি হাব’ বা আসন্নপ্রসবাদের জন্য সাময়িক আশ্রয় তৈরি হয়েছে। প্রসবের এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রসূতিরা সেখানে থাকবেন। তাঁদের দেখভাল করবেন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা। শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে প্রসূতিকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেবেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে সন্তানসম্ভবারা ফোন করলেই যাতে গাড়ি গিয়ে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারে, সেই জন্য থাকছে মাতৃ-শিশু যানের। পরিকাঠামোর উন্নতি শিশু-মৃত্যু কমাতে সাহায্য করেছে। হাসপাতালে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) গড়ে উন্নত পদ্ধতিতে নবজাতকদের চিকিৎসা চলছে।
রাজ্যে মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমাতে তৈরি উচ্চ স্তরের টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও অনেকটা উন্নতি দরকার। সেই চেষ্টা চলছে। যে-সব প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের উপরে নজরদারির সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’’ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই শিশু-স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারই ফল পাওয়া যাচ্ছে। ‘‘স্বাস্থ্য প্রকল্পের পাশাপাশি কন্যাশ্রীর গুরুত্বও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। কারণ, নাবালিকা বিয়ে রুখে দেওয়া গিয়েছে অনেকটাই। ফলে ঠিক সময়ে বিয়ের সুবাদে মেয়েরা সুস্থ সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন,’’ বলেন চন্দ্রিমাদেবী।