Congress

CPM: কংগ্রেস-প্রশ্নে মহাবিতর্ক, সেমিফাইনাল হায়দরাবাদে

সিপিএম পলিটবুরোর বড় অংশই এখন কংগ্রেসের ভরসায় না থেকে বাম ঐক্য গড়ে এগোনোর পক্ষপাতী।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:১৮
Share:

ছবি: পিটিআই।

কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই বিজেপি-বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে সক্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়েই কংগ্রেস সম্পর্কে অবস্থানের প্রশ্নে বিতর্ক তুঙ্গে পৌঁছছে সিপিএমের অন্দরে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থান না নিয়েও সাবেক বামপন্থী ভাবনায় ভর করে আগামী দিনে এগোনোর পক্ষে সওয়াল করছে এক গুচ্ছ রাজ্য সিপিএম। অন্য দিকে আবার পাল্টা সওয়াল চলছে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার কৌশল জারি রাখার জন্য। পার্টি কংগ্রেসে চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়ার আগে এই বিতর্কের উপরে সেমিফাইনাল হতে চলেছে হায়দরাবাদে।

Advertisement

সিপিএম পলিটবুরোর বড় অংশই এখন কংগ্রেসের ভরসায় না থেকে বাম ঐক্য গড়ে এগোনোর পক্ষপাতী। সিপিএমের রাজনীতিতে যে রাজ্যগুলির নেতৃত্বের মতামত নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে থাকে, তার মধ্যে কেরল ও ত্রিপুরা এই পথেরই পথিক। উল্টো দিকে, এখনও পর্যন্ত বাংলার সিপিএম নেতৃত্বের যুক্তি, স্বাবলম্বী ভূমিকা দেখাতে গিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চে বামেরা ফাটল তৈরি করছে— এমন কোনও বার্তা দেওয়া ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে ক্ষতিকর হবে। তাঁরা চান, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খোলা রেখে চলার গত পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত লাইনই বজায় থাকুক। সিপিএম সূত্রের খবর, আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক ও কৌশলগত দলিলের খসড়া তৈরি ঘিরে এই বিতর্কের উপরেই আলোচনা হবে আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। খসড়া দলিল সেখানেই অনুমোদিত হওয়ার কথা।

ঘটনাচক্রে, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পথ খুলেছিল বিগত যে ২২তম পার্টি কংগ্রেসে, তার আসর বসেছিল সীতারাম ইয়েচুরির রাজ্যে হায়দরাবাদেই। আর এ বার সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেস প্রকাশ কারাটের রাজ্য কেরলে!

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য, এ রাজ্যে সিপিএমের যে পাঁচশোরও বেশি এরিয়া কমিটি আছে, তার সিংহভাগের সম্মেলনেই বড় অংশ জুড়ে চলেছে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট-প্রশ্নে বিতর্ক। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা জোট করে গত পাঁচ বছরে বামেদের লাভ তো নয়ই, বরং ক্ষতি হয়েছে— এই মত উঠে আসছে এ রাজ্যের এরিয়া কমিটি স্তর থেকেও। কলকাতা পুরভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও আনুষ্ঠানিক জোট করেনি সিপিএম। এর পরে শুরু হতে চলেছে জেলা ও রাজ্য সম্মেলন। হায়দরাবাদের বৈঠকে যাওয়ার আগে নিজেদের রাজ্যে নেতা-কর্মীদের মনোভাব আরও খানিকটা বুঝে নিতে পারবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যের কথা বলে কংগ্রেসের হাত ধরেছিল সিপিএম। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি বড় অংশের এখন যুক্তি, আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা যে মানুষের পাশে থেকেই বামপন্থীদের বরাবরের লড়াই, তাঁদের জীবনে সমস্যা বাড়িয়ে তোলার পিছনে কংগ্রেসের নীতি কম দায়ী নয়। সিপিএমের এক বর্ষীয়ান পলিটবুরো সদস্যের কথায়, ‘‘বিজেপি অবশ্যই অনেক বেশি আগ্রাসী। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের আগেও কংগ্রেসের ইস্তাহার ভাল করে পড়লে দেখা যাবে, কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের নামে তারা যে কথা বলেছিল, সেই পথেই আরও এগিয়ে মোদী সরকার ওই কালা কৃষি আইন করেছিল! পেট্রো-পণ্যের দামের উপরে বিনিয়ন্ত্রণের নীতিও কংগ্রেসের নেওয়া। শ্রেণিগত ভাবে যে কংগ্রেসের সঙ্গে বামপন্থীদের বিস্তর দূরত্ব আছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের নামে তাদের সঙ্গে বেশি বন্ধুত্ব করলে আমাদের ঘরের লোকেদের কাছেই ভুল বার্তা যাচ্ছে।’’ দলের নেতৃত্বের এই অংশের যুক্তি, আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে গিয়ে নিজেদের ভিতই দুর্বল করে ফেলছে বামেরা।

তবে বিজেপির বিরুদ্ধে সংসদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ লড়াই, বাইরেও যৌথ প্রতিবাদে আপত্তির কথা কেউ বলছেন না। অতিরিক্ত ‘কংগ্রেস-নির্ভরতা’য় গিয়ে নির্বাচনী আঁতাঁত গড়ার বিরোধী সিপিএমের এই অংশ। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের আবার পাল্টা যুক্তি, ‘‘নির্বাচনী কৌশলের সিদ্ধান্ত রাজ্যভিত্তিক পরিস্থিতির উপরে ছেড়ে দেওয়া থাকে। সেই স্বাধীনতা থাকলে অসুবিধা কী?’’

কান্নুর পার্টি কংগ্রেসে যাওয়ার আগে হায়দরাবাদে এই বিতর্কের অন্তত আংশিক মীমাংসা করতে হবে ইয়েচুরিদের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন