দেবযানী মুখোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
একদা অর্থলগ্নি সংস্থার নানা দায়িত্বভার দাপটে সামলাতেন তিনি। গরাদের পিছনেও যেন ‘কর্ত্রী’ হয়ে উঠেছেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। তবে কারা দফতর সূত্রের খবর, দাপুটে নয়, সংশোধনাগারে দেবযানীর কর্তৃত্ব অনেকটাই স্নেহশীলা অভিভাবক ধাঁচের।
সারদা কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়ার পরে এক যুগেরও বেশি জেলবন্দি দেবযানী। এখন দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আবাসিক তিনি। কারা দফতরের খবর, সংশোধনাগারে এক সময়ে শিক্ষকতাও করতেন তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ভূমিকা বদলে গিয়েছে তাঁর। তবে এখনও রীতিমতো ‘দিদিমণির’ ভূমিকাতেই দেখা যায় তাঁকে।
কারা সূত্রের খবর, বর্তমানে জেলের স্বাস্থ্য বিভাগের ‘সহায়ক’ ভূমিকা পালন করেন দেবযানী। মুক্ত জীবনে স্বাস্থ্যকর্মীদের যা কাজ জেলের ভিতরে সেই কাজই করেন তিনি। যেমন, কোনও মহিলা বন্দি অসুস্থ বোধ করলে প্রাথমিক পরীক্ষা এবং শুশ্রুষা করা। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে তার বন্দোবস্ত করা। জেলের চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন লিখে দিলে সেই অনুযায়ী বন্দিদের ওষুধপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার কাজও করেন দেবযানী।
কারা সূত্রের বক্তব্য, সংশোধনাগারে বন্দিদের মধ্যে কার কী গুণ আছে, তা দেখে বিভিন্ন কাজে নিয়োগ করা হয়। সেভাবেই দেবযানীকেও অন্য কাজের পাশাপাশি সংশোধনাগারের ভিতরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রাথমিক ভাবে সহায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর্মীর কাজকর্ম রপ্ত করে নিয়েছেন তিনি। কারা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘দেবযানী খুবই বুদ্ধিমতী। যে ভাবে কাজ শিখেছেন তাতে রীতিমতো ‘প্যারামেডিক্যাল’ কর্মী বললেও অত্যুক্তি হয় না।এখন তো আরও দু’-তিন জন ওঁর সঙ্গে সাহায্যকারী হয়েছেন। বলা তোযায় না, কবে কে জেল থেকেমুক্তি পায়!’’
২০১৩ সালে সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে রাজ্য ছেড়েছিলেন দেবযানী। কাশ্মীর থেকে তাঁদের পাকড়াও করে বিধাননগর কমিশনারেট। পরবর্তী কালে রাজ্যের পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যেও সারদা কেলেঙ্কারির মামলা হয়। এই আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। সেই তদন্ত এখনও শেষ করে উঠতে পারেনি সিবিআই। বিচারও শুরু হয়নি। ওই কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়া ‘প্রভাবশালী’ নেতা-মন্ত্রীরা জামিনে ছাড়া পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। শুধু বন্দিদশা ঘোচেনি সুদীপ্ত ও দেবযানীর। সূত্রের খবর, দু’-একটি বাদে সারদা কেলেঙ্কারির বাকি সব মামলাতেই জামিন পেয়েছেন দেবযানী। বাকি মামলাগুলিতেও জামিন পেলে তবেই বন্দিনীর জীবন থেকে মুক্তি।
গরাদের আড়ালে বোধ হয় সেই দিনেরই অপেক্ষায় ‘দেবযানী দিদিমণি’!
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে