টাকায় টান, লাগাম তাই বরাদ্দের আর্জিতে

রাজকোষে ঘাটতি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে কোনও অনুরোধ করা যাবে না। সমস্যা নিয়ে আগ বাড়িয়ে মুখ খোলারও দরকার নেই। বিধায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্যদের এমনই আগাম পরামর্শ দেওয়া হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার শাসক দলের নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক কর্তাদের তরফে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১১
Share:

রাজকোষে ঘাটতি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে কোনও অনুরোধ করা যাবে না। সমস্যা নিয়ে আগ বাড়িয়ে মুখ খোলারও দরকার নেই। বিধায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্যদের এমনই আগাম পরামর্শ দেওয়া হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার শাসক দলের নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক কর্তাদের তরফে।

Advertisement

সোনারপুর অডিটরিয়ামে কাল, বৃহস্পতিবার জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দ্বিতীয় বার সরকারে ফিরে বেশ কয়েকটি জেলায় সম্প্রতি যে প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, সেখানে স্থানীয় বিধায়ক ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা উন্নয়ন খাতে অর্থ বরাদ্দের আবেদন করেছিলেন। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা বেহাল বলে তাঁদের নিরস্ত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোনারপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে যাতে ফের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী কোনও ভাবে অসন্তুষ্ট না হন, সে দিকে খেয়াল রেখেই বিধায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে আগাম বৈঠক করা হয়েছে এ বার।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত শুক্রবার আলিপুরের জেলা পরিষদ ভবনে ২৭ জন বিধায়কের (সকলেই তৃণমূলের) কাছ থেকে জেলা প্রশাসনের কর্তারা আগাম জানতে চেয়েছিলেন, উন্নয়নের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কাছে তাঁরা কী কী আবেদন করতে চান। সুন্দরবন এলাকার এক বিধায়ক জানান, তাঁদের এলাকায় একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থা খুব খারাপ। চিকিৎসক নেই। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সমস্যাটি উত্থাপন করতে চান জানিয়েছিলেন। জেলা কর্তারা ‘না না, একদম নয়’ বলে ওই বিধায়ককে নিষেধ করেছেন! পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমেই ওই সমস্যার সমাধান করা যাবে বিধায়ককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে পঞ্চায়েত সমিতি আর্থিক বরাদ্দ করবে, জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে তার কোনও সদুত্তর পাননি ওই বিধায়ক।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পানীয় জলের সমস্যা বহু জায়গাতেই। কিন্তু প্রশাসনিক বৈঠকে পানীয় জলের সমস্যা নিয়েও কোনও অভিযোগ করা যাবে না বলে বিধায়কদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ শহরতলির এক বিধায়কের কথায়, ‘‘নোদাখালির পরিস্রুত জল পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ হচ্ছে না। এলাকায় জল পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কানে সমস্যাটা তুলতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু বলে দেওয়া হয়েছে, ওই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কিছুই বলা যাবে না!’’

জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ্য ও সদস্যদের নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করে জেলা প্রশাসনের কর্তারা একই রকমের পরামর্শ দিয়েছেন। কর্মাধ্যক্ষেরা পানীয় জল ও রাস্তা সংস্কার নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছে, পরে বিভাগীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান বার করা হবে। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ শুধু শুনে যেতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে কোনও নিদিষ্ট বিষয়ে প্রশ্ন করলে আলাদা কথা।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘উপযাচক হয়ে কোনও অভিযোগ বা সমস্যা উত্থাপন করার বিষয়ে বিধায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্যদের সজাগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনও ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে না।’’ তাঁদের যুক্তি, রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। মুখ্যমন্ত্রী আগে তা একাধিক বার বলেছেন। তার আর পুনরাবৃত্তি করার পরিস্থিতি ডেকে আনা উচিত নয়। যদিও বিধায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্যের একাংশ পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, কোনও নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান কেন হয়নি, তা নিয়ে পরবর্তী বেঠকে মুখ্যমন্ত্রী যদি সরাসরি কৈফিয়ত চেয়ে বসেন? তখন কোন প্রশাসনিক কর্তা পাশে দাঁড়াবেন? তখন তো রোষানলে পড়তে হবে জনপ্রতিনিধিদেরই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন