সচেতনায় ঢিলেমি এবং আবহাওয়ার কারণেই দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট এলাকাতে ফের ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের মতে, সেপ্টেম্বরের পর থেকে বৃষ্টির অভাবেই ফের ডেঙ্গি মাথাচাড়া দিয়েছে।
এ জেলায় অগস্টের শুরুতে ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারশো জনের উপরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর এবং বালুরঘাট পুরসভা উদ্যোগী হয়ে সে বার পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিল। সেই সময় জেলা জুড়ে বৃষ্টিও নামে, তাতে ডেঙ্গির প্রকোপ কমে যায়। কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান, তারপরে আবার বৃষ্টি নামে। কিন্তু বালুরঘাট ও তার কাছাকাছি এলাকায় তেমন বর্ষণ হয়নি। দুর্গাপুজোর সময় উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি থেকে উত্তর দিনাজপুরে এক টানা কয়েকদিন ধরে ভারী
বৃষ্টি হয়েছে। তাতে অনেক জায়গায় উৎসব পণ্ডও হয়েছে, কিন্তু বালুরঘাটের আকাশে শুধু কালো মেঘই জমতে দেখা গিয়েছে। ভারী বৃষ্টি একেবারেই হয়নি।
পুজোর সময় থেকে এখন অবধি বালুরঘাটে প্রচন্ড গরম চলছে। দিনের বেলা গড় তাপমাত্রার পরিমাণ ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গবেষকদের মতে, বছরের এই সময় এমন গরমের জন্যই ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে বলেন, ‘‘দিনে প্রচণ্ড গরম এবং বেশি রাতে শীতভাব থাকলে ভাইরাল ফিভারের প্রকোপ বেশি হয়।’’ তিনি জানান, ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণ হল, বালুরঘাট এলাকার টানা এই গরম আবহাওয়া। সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘এক টানা ভারী বৃষ্টি হলে মশার লার্ভা ধুয়েমুছে যেত। তা না হয়ে, উল্টে শহরতলি ও গ্রামগঞ্জের বেহাল নিকাশি নালা ও শ্যালো পাম্প সেচের স্বচ্ছ জমা জলে ডেঙ্গির এডিস মশার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বালুরঘাটের চকভৃগু কিংবা পতিরাম এলাকারই তিন জন ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন। হাসপাতালে এখন ভর্তি ৭ ডেঙ্গি রোগীও নিজেদের এলাকাতেই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে ডেঙ্গি প্রতিরোধে সচেতনায় যে তৎপরতা পুজোর আগে দেখা গিয়েছিল, পুজো মরসুমে তা উধাও হয়ে যায় বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে বালুরঘাটের পুরপ্রধান রাজেন শীলের দাবি, ডেঙ্গি প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শিলিগুড়িতেও ডেঙ্গির প্রকোপ একটু একটু করে মাথাচাড়া দিচ্ছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে দু’জন ভর্তি আছেন। শিলিগুড়ি বিভিন্ন নার্সিংহোম ভর্তি রয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এই শহরে বৃষ্টি হলেও নানা জায়গায় জমে থাকা জলেই ডেঙ্গির মশা জন্মাচ্ছে বলে চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, রাস্তার ধারের টায়ারের দোকানে অনেক সময় স্বচ্ছ জল জমে থাকে। অনেকে বাড়িতেও গাছের টব রাখেন। সেখানেও এই মশা জন্মাতে পারে। মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা আগেও সচেতনতা বাড়াতে প্রচার করেছি। আবারও করব।’’ মশা মারতে ধোঁয়া ও জমা জলে তেল দেওয়ার কাজও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অশোকবাবু।
মালদহে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত অন্তত ২৫ জন রোগী মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তাঁদের মধ্যে অনেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা। হাসপাতালের শয্যার তুলনায় রোগী দ্বিগুণ। আউটডোরেও ভিড়। মালদহের মানিকচক ব্লকের বেগমগঞ্জ গ্রামে অজানা জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শুক্রবার ওই গ্রামে স্বাস্থ্য দফতরের মেডিকেল টিম গিয়েছে।