হাওড়ায় প্রথম মৃত্যু, গ্রাসে উত্তরও, রাজ্যে ডেঙ্গির বলি ৮

চলতি মরসুমে এ যাবৎ সে দক্ষিণের চৌহদ্দিতে ঘোরাফেরা করছিল। এ বার গণ্ডি ছাড়িয়ে উত্তরবঙ্গেও পা রাখল ডেঙ্গি। বুধবার শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে চার জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

চলতি মরসুমে এ যাবৎ সে দক্ষিণের চৌহদ্দিতে ঘোরাফেরা করছিল। এ বার গণ্ডি ছাড়িয়ে উত্তরবঙ্গেও পা রাখল ডেঙ্গি। বুধবার শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে চার জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।

Advertisement

ইতিমধ্যে বুধবার রাত পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯৫। মারা গিয়েছেন ৮ জন। স্বাস্থ্যভবনের খাতায় এ দিন হাওড়ায় একটি মৃত্যুর তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে। বাকি মৃতদের ছ’জনই উত্তর ২৪ পরগনার। এক জন দক্ষিণ ২৪ পরগনার।

ডেঙ্গি-পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার নবান্নে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব দফতরকে তিনি হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে বলেছেন। এ দিনও পুরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিধায়ক, সাংসদ
-সহ সমস্ত জনপ্রতিনিধিকে মাঠে নামতে নামতে হবে। আমজনতার উদ্দেশে তাঁর আহ্বান— ‘‘ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, অজানা জ্বর শুরু হয়েছে। সবাই মিলে পরিচ্ছন্ন শহর, গ্রাম গড়ে তুলুন। জল যেন না জমে, মশা যেন ডিম না পাড়ে। জ্বর হলেই হাসপাতালে যাবেন।’’ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করেছে শিক্ষা দফতর। তাদের নির্দেশ— সর্বত্র নিয়মিত সাফাই অভিযান চালাতে হবে। শৌচাগারের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। মশা তাড়ানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা চাই ক্লাসরুমে, ল্যাবে, ওয়ার্কশপে, লাইব্রেরিতে।

Advertisement

এ দিকে চলতি ডেঙ্গি-মরসুমে হাওড়ায় প্রথম মৃত্যুটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে। টিকিয়াপাড়ার জলাপাড়া মসজিদ লেনের বাসিন্দা ফাহিম আহমেদ (২২) গত ২৭ জুলাই জ্বরে পড়েছিলেন। ২৯ জুলাই তাঁকে হাওড়ার এক নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। পরে কলকাতার ডায়মন্ড হারবার রোডের এক বেসরকারি হাসপাতালে। মঙ্গলবার রাতে সেখানে ওই কলেজ-ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য-আধিকারিক ভবানী দাস জানান, গত জানুয়ারি থেকে ৩ অগস্ট পর্যন্ত হাওড়ায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ২৪ জন। উত্তরবঙ্গের চার রোগীর সকলেই শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দা। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক এ দিন বৈঠক ডাকেন। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবনে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরে বিভিন্ন জেলা
স্বাস্থ্য দফতর আপৎকালীন আলোচনা শুরু করেছে।

ডেঙ্গির পাশাপাশি বিপদ বাড়াচ্ছে অজানা জ্বর। হুগলির শ্রীরামপুরে তাতেই মঙ্গলবার এক জন মারা গিয়েছেন। রূপা ভট্টাচার্য (৪২) নামে ওই মহিলার রক্তে কিন্তু ডেঙ্গির জীবাণু মেলেনি। জ্বরের উৎসও চিহ্নিত হয়নি। পরিবারের খবর, শনিবার রূপাদেবীর জ্বর এসেছিল। পাড়ার ডাক্তার প্যারাসিটামল দেন। জ্বর কমলেও পেটে-কোমরে যন্ত্রণা যায়নি। মঙ্গলবার সকালে রক্ত দেওয়া
হয় পরীক্ষার জন্য। দুপুরে অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু। রাতে রিপোর্ট এলে দেখা যায়, প্লেটলেট কাউন্ট ৪৫ হাজারে নেমে গিয়েছিল!

এবং এরই ভিত্তিতে ডাক্তারদের প্রাথমিক অনুমান, মহিলার ডেঙ্গি হয়েছিল। বহু ক্ষেত্রে এক বার পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে না।
বস্তুত সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বলছে, ডেঙ্গির লক্ষণ পূর্ণমাত্রায় থাকলেও অনেকের রক্তে সেই ভাইরাসের কোনও খোঁজই মিলছে না, বারবার পরীক্ষা সত্ত্বেও!

ফলে বিভ্রান্তির চরম। স্বাস্থ্য দফতরের খবর: রাজ্য জুড়ে এ দিন সরকারি স্তরে মোট ১১০০ জনের রক্ত পরীক্ষা হয়েছে। ৩৫০ জনের ডেঙ্গি পজিটিভ। অর্থাৎ, সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের বেশি। পরীক্ষা হয়েছে ৩৩টি কেন্দ্রে, যার মধ্যে অন্যতম কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড)। বেলেঘাটার আইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ডেঙ্গির আইজিএম পরীক্ষার কিট সময়মতো সরবরাহ না-হওয়ায় কিছুটা অসুবিধে হচ্ছে। নাইসেডের অধিকর্তা শান্তা দত্ত বলেন, ‘‘আইজিএম কিট আসে পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি থেকে। কখনও আসতে দেরি হয়। কিন্তু ডেঙ্গি নির্ণয়ের জন্য এনএস-১ এলাইজা কিট
পর্যাপ্ত রয়েছে।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য.অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর অবশ্য দাবি, রাজ্যে কোথাও এই মুহূর্তে কিটের কোনও সঙ্কট নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement