—প্রতীকী ছবি
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মানছে না বহু বেসরকারি হাসপাতাল। তার জেরে আচমকা অবনতি হচ্ছে রোগীর। মারাও যাচ্ছেন কেউ কেউ। জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য দফতরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টে শুক্রবার ধরা পড়েছে এই তথ্য। রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি ফের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাতে পারে, সেই আশঙ্কায় ‘ত়ড়িঘড়ি’ এই কমিটি গড়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।
গত বছর রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপের কথা বহু দিন পর্যন্ত অস্বীকার করেছিল রাজ্য সরকার। যার জেরে পরিস্থিতি কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এই ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যে হাসপাতালগুলিতে শুক্রবার পরিদর্শন হয়, তার প্রায় প্রত্যেকটিতেই বহু ডেঙ্গি রোগী ভর্তি। একাধিক হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যুও হয়েছে। পরিদর্শকেরা স্বাস্থ্যকর্তাদের জানিয়েছেন, বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে তবু কিছু নিয়ম মানা হয়, কিন্তু ছোট হাসপাতালগুলিতে ‘ডেঙ্গি ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল’-এর অ আ ক খ গুরুত্বই পায় না।
বৃহস্পতিবার রাতে স্বাস্থ্য ভবন থেকে একটি সরকারি নির্দেশিকা পৌঁছয় কয়েক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্তার কাছে। সেখানে বলা হয়, এসএসকেএমের মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর নীলাদ্রি সরকার, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক বিভূতি সাহা, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের অধ্যাপক অরুণাংশু তালুকদার এবং তিন স্বাস্থ্যকর্তা দীপঙ্কর মাজি, সুদীপ্ত ভাদুড়ি এবং রাসবিহারী দত্তকে শুক্রবার শহরের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে সেখানকার ‘ডেঙ্গি ম্যানেজমেন্ট’ পরিষেবা খতিয়ে দেখতে হবে। দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘যাবতীয় রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যাচ্ছিল, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে মৃত্যুহার অনেকটাই বেশি। আমরা বুঝে উঠতে পারছিলাম না, এর কারণ কী। জিজ্ঞাসা করলে প্রত্যেক হাসপাতালই জানায়, তারা সমস্ত নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছে। আচমকা হাজির হয়ে প্রকৃত ছবিটা জানা আমাদের কাছে জরুরি ছিল।’’
ঝুঁকির উপসর্গ কী কী
রক্তচাপ কমে যাওয়া
যা মানা হচ্ছে না
ডেঙ্গি ধরা পড়লে প্রতি চার ঘন্টা অন্তর রক্তে জলের পরিমাণ পরীক্ষা (হেমাটোক্রিট)
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পর পর কয়েকটি ঘটনায় দেখা গিয়েছে, বড় সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার আগে হয়তো সেই রোগী অন্য কোথাও চার-পাঁচ দিন ভর্তি ছিলেন। তথ্য খতিয়ে দেখতে গিয়ে বোঝা যাচ্ছে, সেখানে এনএস১ পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু অন্য মাপকাঠিগুলির দিকে খেয়াল রাখা হয়নি।’’ সেগুলি কী? তিনি জানান, জ্বর কমে যাওয়ার পরে যদি পেটে ব্যথা হয়, তা হলে তা খুবই ঝুঁকির। শরীরে ফ্লুইড লিক করার অন্যতম উপসর্গ এটি। বহু ক্ষেত্রে তা পরীক্ষা না করায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। বড় হাসপাতাল বা অভিজ্ঞ চিকিৎসক কেউই কিছু করতে পারেননি।
সরকারি তরফে আচমকা এই পরিদর্শনে কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালগুলি। এক হাসপাতালের মেডিসিন-এর চিকিৎসক বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে কাজে ঢিলেমি এসেছিল অনেকেরই। সরকারি প্রতিনিধিদের আচমকা হানায় সকলে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছেন।’’ স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে শাস্তির ভয় নেই। তবে তাদের আরও সচেতন হতে হবে। সচেতন করার পরেও যদি কেউ তা না মানে, তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।