পিঠোপিঠি দু’টি গ্রামে জ্বরে ভুগছিলেন বহু মানুষ। উপসর্গ দেখে গ্রামের অনেকেরই মনে হয়েছিল, রোগটা ডেঙ্গি হতে পারে। সোমবার মেডিক্যাল টিম গিয়েছিল নদিয়ার কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের গোয়ালদহ ও মহিষন্যাংড়া গ্রামে। রক্ত পরীক্ষা হয়েছিল জ্বরে আক্রান্ত গ্রামবাসীদের। মঙ্গলবার নদিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর কবুল করে, নদিয়ার ওই দুই গ্রামে অন্তত আট জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।
যেখানে জনবসতি ঘেঁষাঘেষি সেখানে কারও ডেঙ্গি হলে এবং সেই গ্রামীণ পরিবেশে এডিস ইজিপ্টাই মশা থাকলে ডেঙ্গি সংক্রমণ যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তাই শহরের বস্তি অঞ্চলগুলিতে বিশেষ সতর্কতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। একই ভাবে যে সব গ্রামে জনবসতি বেশি সেগুলির উপরেও নজরদারি চালাতে বলা হয়েছিল। এর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক একটি গ্রামে এক জনের ডেঙ্গি ধরা পড়ার কিছু দিনের মধ্যেই দেখা গিয়েছিল রোগটি ছড়িয়ে পড়েছিল দ্রুত। নদিয়ার ওই দু’টি গ্রামের ক্ষেত্রে তেমনই ঘটেছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
গোয়ালদহ ও মহিষন্যাংড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত এক মাস থেকে শতাধিক মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। রক্ত পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গি হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য দফতর কোনও মতেই তা মানতে চাইছিল না। সোমবার রাতেও মহিষন্যাংড়ার আশিস মণ্ডল নামে এক যুবককে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতায় পাঠানো হয়। তিনি বর্তমানে বাগুইআটির একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন।
কৃষ্ণনগরের মতো ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড
হারবার মহকুমাতেও। মথুরাপুরের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায়। তার পরেও ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল-সহ গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে কয়েক জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁরা ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে আসছেন তাঁদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতার পাঠানো হচ্ছে।’’ ডেঙ্গির দাপট বাড়ছে উত্তরবঙ্গেও। শিলিগুড়ি শহরে মঙ্গলবার আরও তিন জনের রক্তে নতুন করে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৫৭। তা ছাড়া পাহাড়ে ১১ জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। তার মধ্যে দার্জিলিং শহরে আক্রান্ত অন্তত ৫ জন। শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ছাড়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকাতেও ডেঙ্গির সংক্রমণ ছড়িয়েছে। শিলিগুড়ি ছাড়া জলপাইগুড়ি শহরে অন্তত ৭ জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। তাঁদের মধ্যে এক জন জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর এক জনকে রেফার
করা হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
হুগলির শ্রীরামপুরে ডেঙ্গির প্রকোপ এতটাই হয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর শ্রীরামপুরকে ডেঙ্গি মহামারি ঘোষণা করে। এখন অবশ্য ডেঙ্গির প্রভাব কমেছে বলে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি। তবে শহর থেকে ডেঙ্গি এখনও একে বারে নির্মূল হয়নি। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে এখনও দু’-চার জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন জ্বরের উপসর্গ নিয়ে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্রীরামপুরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে।’’