প্রতীকী ছবি।
অবশেষে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোল!
গত বছর কেন্দ্রের কাছে অসমাপ্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে রাজ্য সরকার বোঝাতে চেয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে। তখনই কেন্দ্রের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, ডেঙ্গির সঠিক তথ্য চেপে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনওটাকে অজানা জ্বর, কোনওটাকে শক সিনড্রোম অ্যাখ্যা দিয়ে আসল তথ্য যে চেপে রাখা হয়েছিল, তা পরিষ্কার হয়ে গেল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টেই। যাতে দেখা যাচ্ছে, গত বছর রাজ্যে ডেঙ্গি সংক্রমণের হার ছিল ২০১৬ সালের থেকে ৫৮.৯ শতাংশ বেশি।
চলতি বছরে কী ভাবে রাজ্যে ডেঙ্গি মোকাবিলা করা হবে, তার আগাম পরিকল্পনা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। ‘স্টেট ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা প্ল্যান, ২০১৮’ নামে প্রকাশিত সরকারি পুস্তিকায় জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার ৮৯৬। মৃত্যু হয়েছিল ৩৮ জনের। ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৩ হাজার ২১৩ জন এবং ৪৫ জন।
কেন্দ্রের ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের কাছে পাঠানো রিপোর্টে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন ওই বিভাগ প্রকাশিত ২০১৭ সালের রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গ ৪ অক্টোবরের পরে আর তথ্য পাঠায়নি। ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের খাতায় ২০১৭ সালে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত ১০ হাজার ৬৯৭। মৃত ১৯। মন্ত্রকের এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘কম তথ্য দিয়ে কী লাভ হল বুঝলাম না। মাঝখান থেকে রোগ মোকাবিলায় কেন্দ্রের অনুদান কমবে।’’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত পুস্তিকা অনুযায়ী, গত বছর সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনায়। সেখানে প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় ১০০ জনের বেশি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। যা ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া নদিয়া, দার্জিলিং, কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০ থেকে ৯৯। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেই স্বাস্থ্য কর্তারা দাবি করেছেন।
স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এডিস মশার অনিয়ন্ত্রিত বংশবৃদ্ধি ডেঙ্গি বাড়ার মূল কারণ। অর্থাৎ মশা প্রতিরোধী ব্যবস্থা তেমন নেওয়া হয়নি।’’ স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে, গত বছর বাড়তি অর্থ বরাদ্দ হলেও জমা জল সরানো, নিকাশির উন্নতি, এলাকা পরিষ্কার রাখার কাজে পঞ্চায়েত-পুরসভার আরও বেশি তৎপরতার প্রয়োজন ছিল। সেই কাজ তত ভাল হয়নি বলেই মশা বেড়েছিল, মাত্রা ছাড়িয়েছিল ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। তবে চিকিৎসা পরিষেবা পর্যাপ্ত থাকায় মৃত্যু কমানো গিয়েছিল।
ওই কর্তার দাবি, এ বার আগে থেকেই পঞ্চায়েত-পুরসভা সক্রিয় হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরও ভাইরাসের প্রকৃতি নিয়ে সতর্ক রয়েছে। ফলে গত বারের ভয়াবহ পরিস্থিতি এ বার আটকানো যাবে বলেই তাঁর আশা।
আরও পড়ুন : পড়াশোনা সামলে, আনাজ বেচে ওঁরা কৃষিরত্ন
কিন্তু প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে কেন্দ্রকে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল কেন? এক কর্তার ব্যাখ্যা, রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। ফলে তা এখনও কেন্দ্রকে জানানো যায়নি। তথ্য গোপন করার কোনও প্রশ্নই নেই। বরং সবটাই পুস্তিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।