ডেঙ্গি সঙ্কট

ছুটি তাই রিপোর্ট বন্ধ, চূড়ান্ত ভোগান্তি

এক সপ্তাহ আগে স্বাস্থ্য ভবন জানিয়েছিল, ডেঙ্গি পরিস্থিতির মোকাবিলায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালকে সব রকম ভাবে তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই ‘তৈরি থাকা’র নমুনা ঠিক কী রকম তার নজির মিলল সোমবার, বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৬ ০২:১১
Share:

এক সপ্তাহ আগে স্বাস্থ্য ভবন জানিয়েছিল, ডেঙ্গি পরিস্থিতির মোকাবিলায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালকে সব রকম ভাবে তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই ‘তৈরি থাকা’র নমুনা ঠিক কী রকম তার নজির মিলল সোমবার, বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে। ১৩ দিন ধরে জ্বরে ভুগতে থাকা রোগী তাঁর রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেন না সরকারি হাসপাতাল থেকে। অভিযোগ, হাসপাতাল কর্মীরা তাঁকে জানান, স্বাধীনতার দিবসের ছুটি থাকায় এ দিন রিপোর্ট দেওয়া যাবে না। ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর পরিবারের লোকেরা। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতােল।

Advertisement

যদিও এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ডেঙ্গির জেরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও এ দিন বিভিন্ন হাসপাতালেই প্যাথোলজি বিভাগ বন্ধ ছিল। এমনকী স্বাস্থ্য ভবনেও ছুটি ছিল। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, রবিবার দুপুরের পর থেকে আরও ৭০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৮৭০।

সরকারি হাসপাতালগুলিকে সব রকম ভাবে তৈরি থাকার কথা বলা সত্ত্বেও কেন এ দিন সরকারি হাসপাতালগুলিতে রক্ত পরীক্ষা হয়নি? এমনকী পরীক্ষার রিপোর্টও দেওয়া হয়নি? জবাব দেননি স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে মঙ্গলবার জানানো হবে।’’

Advertisement

বাগুইআটির বাসিন্দা সুদীপ বিশ্বাসের চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে জ্বর হয়েছে। প্রথমে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে যান তিনি। তাঁর পরামর্শমতো ৫ তারিখ বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান তিনি। ডেঙ্গি সন্দেহ করে রক্তপরীক্ষার নির্দেশ দেন চিকিৎসক। সেই অনুযায়ী ৮ তারিখ হাসপাতালে সুদীপবাবুর রক্তপরীক্ষা করা হয়। তাঁর এবং সতীর্থদের দাবি, এ দিন তার রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। সুদীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘জ্বর কমছে না। শরীর ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। ছুটি আছে বলে রিপোর্ট দিল না। চিকিৎসার আরও দেরি হয়ে গেল।’’

এই ঘটনায় হাসপাতালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যখন চারদিকে মশাবাহিত রোগ বিশেষত ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে, তখন কী ভাবে প্যাথোলজি দফতরকে ছুটি দেওয়া হল? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতালের মতো এই হাসপাতালেও জরুরি বিভাগ ছাড়া অন্য সমস্ত দফতরই এ দিন বন্ধ রয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে দফতর খোলা রাখা নিয়ে কোনও নির্দেশিকা আসেনি।

হাসপাতাল সুপার পার্থপ্রতিম গুহ বলেন, ‘‘ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ থাকলে লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়েছে। খতিয়ে দেখা হবে।’’ বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘আমি অবিলম্বে খোঁজ নিয়ে দেখছি। অবশ্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’

এ দিকে, শুধু ডেঙ্গি নয়, রাজ্যে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও থেমে নেই। হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এ দিন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। রাঁচি থেকে হাওড়ার বাঁকড়ায় মামার বাড়িতে বেড়াতে এসে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল বছর ষোলোর পরভিন খাতুন। শুধু সে-ই নয়। তাঁর মা এবং ভাই-ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সোমবার সকালে হাওড়ার বালিটিকুরি-র এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরীর। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মিক্সড (ফ্যালসিপেরাম ও ভাইভ্যাক্স একসঙ্গে) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন পরভিন। কয়েক দিন আগে ওই কিশোরী-সহ তাঁর মা মনিরা বেগম ও ভাই শেখ আকবরকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরভিনকে শনিবার রাতে বালিটিকুরির ওই বেসরকারি ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে মনিরা ও আকবরকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement