Delhi Police on Mamata Banerjee’s Post

বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী ও শিশুকে মারধরের গল্প ভিত্তিহীন! মমতার ভিডিয়ো-দাবি খারিজ করল দিল্লি পুলিশ

সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে দিল্লি পুলিশের ডিএসপি (পূর্ব) অভিষেক ধনিয়া জানান, দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সত্য নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৫ ২৩:০৭
Share:

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লিতে কাজের সন্ধানে যাওয়া এক পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী এবং শিশুপুত্রকে মারধর করার অভিযোগ তুলে রবিবার একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ ছিল, ভাষা সন্ত্রাসে পরিত্রাণ নেই শিশুরও! সেই অভিযোগ নস্যাৎ করল দিল্লি পুলিশ। সোমবার দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যে ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন, সেই ভিডিয়োয় মহিলা যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ অসত্য এবং ভিত্তিহীন। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই মহিলা জানিয়েছেন কেন তিনি ওই ভিডিয়ো করেছিলেন! দিল্লি পুলিশের এই দাবিকে হাতিয়ার করে বাংলার শাসক দল তৃণমূল এবং মমতাকে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে বিজেপি।

Advertisement

কী দাবি দিল্লি পুলিশের? সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে দিল্লি পুলিশের ডিএসপি (পূর্ব) অভিষেক ধনিয়া জানান, দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সত্য নয়। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে অভিযোগ করেন এক জন বাংলাভাষী মহিলাকে এবং তাঁর সন্তানকে লাঞ্ছনা করেছে দিল্লি পুলিশ। এই অভিযোগ পাওয়ার পরেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়।’’ তদন্তে কী জানা গিয়েছে, তার ব্যাখ্যাও করেছেন অভিষেক। দিল্লি পুলিশের ওই আধিকারিকের দাবি, ওই ভিডিয়োতে থাকা মহিলার পরিচয় জেনে তাঁর বাড়িতে যান তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই মহিলা জানান, ২৬ জুলাই রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সাদা পোশাকে চার জন দিল্লি পুলিশের কর্মী তাঁদের বাড়িতে আসেন এবং তাঁদের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে তাঁদের থেকে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন ওই পুলিশকর্মীরা। মারধরও করা হয়।

তবে দিল্লি পুলিশের দাবি মহিলার এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। দিল্লি পুলিশের ডিএসপি (পূর্ব) অভিষেক জানান, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। প্রযুক্তিগত সহয়তা এবং সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ঘটনার সত্য নিরূপণ করে পুলিশ। নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ওই মহিলার বলা গল্প ভিত্তিহীন! তার পরে আবার ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সময় ওই মহিলা স্বীকার করেন, মালদহে তাঁর এক আত্মীয় রয়েছেন, যিনি এক জন রাজনৈতিক কর্মী। তাঁর কথাতেই ওই ভিডিয়ো তৈরি করেছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন ওই মহিলা। পরে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিষেকের কথায়, ‘‘দিল্লি পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’

Advertisement

দিল্লি পুলিশের এই দাবিকে হাতিয়ার করে বিজেপি নেতারা আক্রমণ শানাতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই না-করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি পুলিশকে নিশানা করে পোস্ট করেন। সুকান্তের কথায়, ‘‘বিষয়টি শুধু বাঙালির জন্য উদ্বেগের বিষয় নয়, বরং বিভক্ত করার মরিয়া প্ররোচনা!’’ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও একই অভিযোগ তুলেছেন। তিনিও একটি সিসিটিভি ফুটেজের ভিডিয়ো নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে মিথ্যা প্রচারের দাবি করেছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

তবে এ প্রসঙ্গে কী ভাবে শুভেন্দুর কাছে সিসিটিভি ফুটেজ গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যখন বিনেশ ফোগাত প্রতিবাদে নেমেছিলেন তখন তাঁকে নিগ্রহ করেছিল এই দিল্লি পুলিশ। এরাই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ছাত্রদের পিটিয়েছিল। এরাই কানহাইয়া কুমারের ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়িয়ে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। সুতরাং দিল্লি পুলিশের মন্ত্রই হল মিথ্যা।’’ তৃণমূল মুখপাত্রের আরও প্রশ্ন, শুভেন্দু অধিকারী কি সিসিটিভি ফুটেজ দিল্লি পুলিশকে সাপ্লাই দিচ্ছে, না কি দিল্লি পুলিশ শুভেন্দুকে দিচ্ছে?

কী দাবি করেছিলেন মমতা? রবিবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পোস্ট করা ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, এক যুবক তাঁর শিশুপুত্রের গায়ে কিছু আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলছেন, “দেখো আমার ছেলেকে মেরে কী করেছে। পুলিশ মেরে কপাল ফাটিয়ে দিয়েছে।” তাঁদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু ফেলে দেওয়া হয়েছে বলেও ভিডিয়োয় অভিযোগ করতে শোনা যাচ্ছে তাঁকে। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে ওই যুবকের স্ত্রীকেও। ওই যুবক স্ত্রীকে দেখিয়ে বলছেন, “একেও খুব মেরেছে” (যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)। সেই ভিডিয়ো পোস্ট করে মমতা সমাজমাধ্যমে লেখেন, “সাংঘাতিক সন্ত্রাস। দেখুন, দিল্লি পুলিশ মালদার চাঁচলের এক পরিযায়ী পরিবারের এক শিশু ও মা-কে কী নিষ্ঠুর ভাবে মেরেছে!” একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “দেখুন, বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিজেপির ভাষা সন্ত্রাসে একটি শিশুরও পরিত্রাণ নেই!” মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “দেশকে এরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?” বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সেই দাবি নস্যাৎ করল দিল্লি পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement