বাহিনী, ভেড়ির টাকা! এটাই সন্দেশখালি

শনিবারের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ভাঙ্গিপাড়ার যে দু’জন বিজেপি স্থানীয় নেতার মৃত্যু হয়েছে, সেই প্রদীপ মণ্ডল এবং সুকান্ত মণ্ডল সম্পর্কে ভাই।

Advertisement

স্যমন্তক ঘোষ 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০৩:১৯
Share:

ফাইল চিত্র।

এক দিকে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত। অন্য দিকে ‘শাজাহান বাহিনী’ এবং ভেড়ির কোটি কোটি টাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে এটাই এখন সন্দেশখালির রাজনৈতিক চিত্রপট। তাঁদের অকপট বক্তব্য, অশান্তি, অরাজকতা এখানে নিত্য দিনের ঘটনা। শনিবার ভাঙ্গিপাড়ায় যা ঘটেছে, বহু দিন ধরেই তার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। অশান্তির সলতে পাকিয়েছে সব পক্ষই।

Advertisement

শনিবারের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ভাঙ্গিপাড়ার যে দু’জন বিজেপি স্থানীয় নেতার মৃত্যু হয়েছে, সেই প্রদীপ মণ্ডল এবং সুকান্ত মণ্ডল সম্পর্কে ভাই। একই গ্রামের নিখোঁজ বিজেপি কর্মী দেবদাস মণ্ডলও তাঁদের আত্মীয়। রবিবার প্রত্যেকের পরিবারের তরফেই বলা হয়, প্রদীপই ছিলেন এলাকায় বিজেপির নেতা। তাঁর ভাই সন্দীপ মণ্ডলের দাবি, ‘‘এর আগেও একাধিকবার শাহজাহান বাহিনী এসে দাদাকে হুমকি দিয়েছে। মারধর করা হয় সকলকেই। এমনকি, ভোটের দিনেও বুথে এজেন্ট হিসেবে বসতে দেওয়া হয়নি। পুলিশি নিরাপত্তায় ভোট দিতে নিয়ে গিয়েছিল।’’

কে এই প্রদীপ? এক সময় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিআইচপি) যুব সংগঠন বজরং দল করতেন তিনি। এলাকার মানুষকে হিন্দুত্ববাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নানা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করতেন। পরে কিছু দিন হিন্দু সংহতি মঞ্চ নামে একটি সংগঠন ঘুরে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। ভাঙ্গিপাড়ার আশপাশের গ্রামের অনেকেরই বক্তব্য, গত বেশ কয়েক বছর ধরে আরএসএস এবং ভিএইচপি ওই এলাকায় চোখে পড়ার মতো শক্তিবৃদ্ধি করেছে। যা মানছেন ভিএইচপি-র রাজ্য নেতারাও। প্রদীপ যে এক সময় বজরঙ্গ করতেন, তা-ও স্বীকার করছেন তাঁরা।

Advertisement

আর এর সঙ্গে সঙ্গেই এলাকায় বেড়েছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা। অভিযোগ, পুকুর এবং ভেড়ি দখলের রাজনীতিতেও ইদানীং ধর্মীয় মেরুকরণ স্পষ্ট হচ্ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকরই বক্তব্য, শনিবার যা ঘটেছে, তা কেবল পতাকা লাগানোর গন্ডগোল নয়। এর শিকড় অনেক গভীরে।

মেরুকরণ যে হয়েছে তা মানছেন মন্ত্রী তাপস রায়ও। হিন্দুত্ববাদীদের ‘বিভেদে’র রাজনীতিকেই এর জন্য দায়ী করেছেন তিনি।

অন্য দিকে, বিজেপি-ভিএইচপি-র অভিযোগের আঙুল স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ শাজাহানের দিকে। তাঁর বাইক বাহিনীর ‘টহল’ যে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়, তা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় স্বীকার করেন পুলিশ আধিকারিকেরাও। তাঁদের দাবি, সিপিএম আমল থেকেই শাজাহানকে ‘ছোঁয়া’ যায় না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর কারণ তাঁর মাথায় রাজনীতির হাত। শাজাহানের হাতে টাকা আছে, পেশি আছে। শাজাহান অবশ্য এ সব মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বরাবর মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাই মানুষ ভালবাসেন। যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁরা এলাকায় বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছেন। আক্রমণ হলে, প্রতিরোধ হবেই।’’

এ-ও সত্য, এলাকায় এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে শাজাহানের ‘ইমেজ’ অনেকটা রবিন হুডের মতো। শনিবারের ঘটনায় নিহত কায়ুম মোল্লার বাবারই যেমন দাবি, তাঁর ছেলে শাহজাহানের মতো হতে চাইতেন। পাঁচ মাস আগে বিয়ে করা কায়ুম অনেক বছর ধরেই শাজাহানের শাগরেদ।

স্থানীয় মানুষের একাংশের ব্যাখ্যায়, এখানেই ঢুকে পড়ে ভেড়ির টাকার গল্প। তাঁদের দাবি, ভেড়ির টাকার নিয়ন্ত্রণ যাঁদের হাতে, তাঁরাই বরাবর এলাকার ‘নবাব’। শাজাহানের বিরুদ্ধে বিরোধী ও এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ এটাই। তাঁদের আরও দাবি, সেই টাকাতেই একদিকে রবিন হুড ইমেজ যেমন তৈরি করেছেন, অন্য দিকে তৈরি হয়েছে বাহিনী। সেই বাহিনী ছাড়া এক পা-ও নড়েন না তিনি। এমনকি, এ দিন রাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে নিহত কায়ুম মোল্লার বাড়ি যাওয়ার সময়েও ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে তাঁর সঙ্গে দেখা গিয়েছে বিশাল বাইক বাহিনী। পুলিশও তাঁকে আটকায়নি। আর এ প্রসঙ্গে শাজাহানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘নিহত কর্মীর বাড়িতে সমবেদনা জানাতে এসেছি। সঙ্গে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সকলেই কায়ুমকে ভালবেসে এসেছেন।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন