যৌথ প্রযোজনার সুখবর নিয়ে ও-বাংলার তথ্যমন্ত্রী

পাঁচ বছর আগে শেখ হাসিনা সরকারের তথ্য মন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই টালিগঞ্জ ও ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্পকে মেলাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ইনু।

Advertisement

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১০
Share:

হাসানুল হক ইনু

দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ এ বার শুধু এগিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা। এ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ানো বেশ কয়েকটি আইনগত বিষয় ও সরকারি নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে দিল্লি ও ঢাকার যৌথ উদ্যোগে একটি প্রামাণ্য বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়টিও এগিয়েছে। নতুন বছরে এই দুই সুখবর এবং বাংলাদেশের এক ঝাঁক সিনেমা ঝুলিতে নিয়ে বহস্পতিবার কলকাতায় আসছেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

Advertisement

পাঁচ বছর আগে শেখ হাসিনা সরকারের তথ্য মন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই টালিগঞ্জ ও ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্পকে মেলাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ইনু। কলকাতায় এসে টালিগঞ্জের পরিচালক, অভিনেতা ও কলাকুশলীদের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করে গিয়েছিলেন তিনি। প্রসেনজিৎ, গৌতম ঘোষ, ঋতুপর্ণ ঘোষেরা তাঁর ডাকে ঢাকায় গিয়ে ও-বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পমহলের সঙ্গে আলোচনাতেও বসেছিলেন। তার পরে যৌথ প্রযোজনায় কয়েকটি চলচ্চিত্র তৈরি হলেও উৎসাহে ভাটা পড়ে। ঢাকা থেকে আনন্দবাজারকে ইনু জানালেন, ‘‘পথ হাঁটতে গিয়ে বেশ কিছু আইনি জটিলতা, সরকারি নীতিমালার অস্বচ্ছতা বাধা হিসেবে উঠে আসে। আমরা সেগুলিকে চিহ্নিত করে একটার পর একটা সবই সংশোধন করেছি।’’

কী রকম বাধা? বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন— যেমন, যৌথ উদ্যোগের চলচ্চিত্র নির্মাণে একটি শর্ত ছিল দু’দেশের দু’জন পরিচালক রাখতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা অবাস্তব শর্ত। এ ধরনের অনেক অবাস্তব শর্তই আমরা বাদ দিয়েছি।’’ তিনি জানান, এ বিষয়ে উৎসাহের অভাব নেই। বাধা সরে যাওয়ায় এ বার যৌথ নির্মাণ শুরুর অপেক্ষা। এ বারেও টালিগঞ্জের বেশ কয়েক জন পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে কথা হবে তাঁর।

Advertisement

ঢাকার অনেক পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলী এই যৌথ উদ্যোগের বিরোধী। তাঁদের অভিযোগ, দরজা খুলে দিলে ‘বিদেশি চলচ্চিত্র হাঙরেরা’ ঢাকার খুঁড়িয়ে চলা চলচ্চিত্র শিল্পকে গিলে খাবে। আন্দোলনেও নেমেছিলেন তাঁরা। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্পকে অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতেই যৌথ প্রযোজনার পথে এগোনো। এর ফলে কারিগরি
মান উন্নত হবে, শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে, কলাকুশলীরা কাজ পাবে, সব চেয়ে বড় কথা— দুই দেশ মিলে একটা বিরাট বাজার পাবে বাংলা চলচ্চিত্র।’’ এ বিষয়ে ভুল ধারণা দূর করতে সরকার আলোচনা চালাচ্ছে বলে জানান ইনু।

শুক্রবার কলকাতায় ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের’ সূচনা করবেন সে দেশের তথ্যমন্ত্রী। নন্দনে চার দিনের
এই উৎসবে যে ২৪টি ছবি দেখানো হবে, তার মধ্যে অনেকগুলিই প্রথম দেখবে কলকাতা। থাকছে ‘আয়নাবাজি’, ‘গেরিলা’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’-এর মতো ছবি। নন্দন ও নজরুল তীর্থে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক দুর্লভ আলোকচিত্রের প্রদর্শনী। ইনু জানান, এর পরে এ বাংলার বাছাই করা সিনেমা নিয়ে বাংলাদেশে একটি প্রদর্শনী করতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। ঢাকার বাইরে রাজশাহি, খুলনা, চট্টগ্রাম, যশোরের মতো শহরগুলিতেও তা দেখানো হবে।

ভারতের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে বাংলায় একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র তৈরির বিষয়ে তাঁর মন্ত্রক অনেকটা এগিয়েছে বলে জানান ইনু। ভারতের মহাফেজখানায় যুদ্ধের বহু দুর্লভ ভিডিও রয়েছে বলে জেনেছেন তিনি। এ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী ও হাসিনার মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। সে সময়ে ইনু চেয়ে‌ছিলেন তাঁর প্রিয় পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ ছবিটি পরিচালনার দায়িত্ব নিন। কিন্তু তিনি প্রয়াত। ইনু বলেন, ‘‘২০২০-তে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১-এ পঞ্চাশে পা দেবে বাংলাদেশ। তার আগেই ছবিটি শেষ করতে চাই আমি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন