মিলেছে প্রতিশ্রুতি, মেলেনি উড়ালপুল

একের পর এক ভোট গিয়েছে। মিলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের প্রতিশ্রুতি। তবু আজ পর্যন্ত তৈরি হল না দক্ষিণ-পূর্ব হাওড়া খড়গপুর শাখার বাউরিয়া উড়ালপুল। লেভেল ক্রসিংয়ের গেট একবার বন্ধ হলে ফের তা খুলতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

বাউড়িয়া শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০১:২০
Share:

গেট পড়লেই শুরু হয়ে যায় যানজট। বাউড়িয়ার কাছে লেভেল ক্রসিংয়ে সুব্রত জানার তোলা ছবি।

একের পর এক ভোট গিয়েছে। মিলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের প্রতিশ্রুতি। তবু আজ পর্যন্ত তৈরি হল না দক্ষিণ-পূর্ব হাওড়া খড়গপুর শাখার বাউরিয়া উড়ালপুল।

Advertisement

লেভেল ক্রসিংয়ের গেট একবার বন্ধ হলে ফের তা খুলতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ফলে যানজটে নাজেহাল হতে হয় যানচালক থেকে সাধারণ মানুষ সকলকেই। রাস্তার দু’দিকে গাড়ির লাইন পড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে বাউড়িয়ার মানুষকে।

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই এখানে উড়ালপুলের দাবি জানিয়ে আসছেন বাসিন্দারা। কিন্তু তারপরেও এখনও পর্যন্ত কোনও উড়ালপুল তৈরির সম্ভবনা দেখতে পারছেন না এলাকাবাসী। এক পাশে ছয় নম্বর জাতীয় সড়ক। অন্য পাশে চটকল কারখানা। তা ছাড়া রয়েছে স্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাজার। ফলে দু’পারের মানুষদেরই প্রত্যেকদিন বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে দিনে একাধিকবার রেল লাইন পার হতে হয়। তাছাড়া এই এলাকা সংলগ্ন বুড়িখালি, কাজীর চরা এবং বাসুদেবপুর অঞ্চলের মানুষও এই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে সকাল বেলা অফিস যাত্রী বা স্কুল পড়ুয়ারা যেভাবে লেভেল ক্রসিং পার হয় তা বেশ বিপদজনক। দেরি হওয়ার জন্য অনেক সময় দেখা গিয়েছে অনেক ছাত্রই আইন উপেক্ষা করে কেবিন গেটের নীচ দিয়ে পার হয়ে যান। শুধু ছাত্র নয় অফিস যাত্রীরাও তাঁদের গন্তব্যে তাড়াতাড়ি পৌঁছনোর জন্য এভাবেই পার হয়। কিন্তু এভাবে যে কোনও সময় ঘটতে পারে বড় কোনও দূর্ঘটনা। বুড়িখালি ক্ষেত্রমোহন ইনস্টিটিউশনের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র সুদীপ্ত পাণ্ডে বলে, “স্কুলে যাওয়ার সময় প্রায় রোজই আধ ঘন্টার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যে কারণে বাড়ি থেকে অনেক আগেই হাতে সময় নিয়ে বেরোই। কিন্তু যেদিন একটু দেরি হয়ে যায় সেদিন স্কুলে পৌঁছতে সমস্যা হয়।”

Advertisement

এছাড়াও সমস্যা রয়েছে চটকলে আসা বড় বড় ট্রাকের ক্ষেত্রেও। দীর্ঘক্ষণ এই ট্রাকগুলি দাঁড়িয়ে থাকার ফলে কেবিনের পাশের রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। সেই জট ছাড়তে বহু সময় লেগে যায়। সেখানে কোনও পুলিশ থাকে না বলে যানজট তৈরি হলেই গাড়ি থেকে লোকেরা নেমে নিজেরাই সেই জট ছাড়ান। এলাকার মানুষের বক্তব্য, ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে তত্‌কালীন তৃণমূলের প্রার্থী সুলতান আহমেদকে তাঁরা বাউড়িয়ায় উড়ালপুলের দাবি জানিয়েছিলেন। সে সময় বাউড়িয়া স্টেশন এলাকা ও স্টেশন রোডে আলো পরিষেবার সংস্কার করা হয়েছিল। তখনই সাধারণ মানুষ আশা করেছিলেন উড়ালপুল তৈরি হতে পারে। কিন্তু তারপরে কেটে গিয়েছে পাঁচটি বছর। আবার সদ্য লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তিনি। এবারেও সাধারণ মানুষ আশায় বুক বাঁধছেন। উলুবেড়িয়ার সাংসদ তৃণমূলের সুলতান আহমেদ জানান, বাউড়িয়াতে উড়ালপুলের জন্য কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কোনও উড়ালপুল তৈরি হতে গেলে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের যৌথ উদ্যোগে তা করতে হয়। যে কারণে কোনও এক পক্ষ অনীহা দেখালে তা করা অসম্ভব। তাঁর কথায়: “বাউড়িয়া রেলস্টেশনকে মডেল স্টেশন করা হয়েছে। জানি বাউড়িয়া রেল কেবিনে উড়ালপুল হওয়া দরকার। আমি নির্বাচনের সময়ে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলাম। আমি সেই জায়গা থেকে সরে আসিনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

এদিকে রেল দফতর সূত্রের খবর উড়ালপুল তৈরির ব্যাপারে তাদের তরফ থেকে পদক্ষেপ করা হয়েছিল। রাজ্য সাড়া দেয়নি। অথচ সাংসদ বলছেন তিনি রেল দফতরে চিঠি পাঠিয়েছেন। ফলে পরস্পর বিরোধী মন্তব্যে কয়েকধাপ এগিয়েও ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ল দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়গপুর শাখার বাউড়িয়ায় উড়ালপুল (আরওবি) তৈরির সম্ভাবনা। এ প্রসঙ্গে অবশ্য দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “একটি উড়ালপুল তৈরি করতে হলে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হয়।” যদিও এ বিষয়ে হাওড়ার জেলা শাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, “আমি পিডব্লিউডি-র সঙ্গে কথা বলেছি। বাউড়িয়ায় এ ধরনের কোনও আরওবি (উড়ালপুল) হওয়ার কথা হয়েছিল বলে তাঁদের জানা নেই।” শেষে স্থানীয় উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক রাজ্যের কারা মন্ত্রী তৃণমূলের হায়দার আজিজ সফি বলেন, “উলুবেড়িয়াতে আরওবি-র কথা হয়েছিল। বাউড়িয়াতে আন্ডারপাসের কথা হয়। বাউড়িয়ার সমস্যার বিষয়টি আমি দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন