পড়ে রয়েছে স্মৃতিটুকু। —নিজস্ব চিত্র।
ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা নির্জন জায়গাটায় তাসখেলার আসর বসে। রাতের অন্ধকারে চলে সাট্টা, জুয়া, মদের ঠেক। সমাজবিরোধীদের নিয়মিত আনাগোনা। জগৎবল্লভপুরের পাঁতিহালে কবি বিষ্ণু দে-র পৈতৃক ভিটের বর্তমানে এই দশা।
প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো দোতলা বাড়িটির অস্তিত্ব প্রায় নিশ্চিহ্ন। শুধু পড়ে রয়েছে বাড়িতে ঢোকার মুখে ইটের খিলানের তৈরি তোরণটি। বিষ্ণু দে-র জন্মশতবার্ষিকীর পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও তাঁর পৈতৃক ভিটায় সরকারি উদ্যোগে কোনও ফলক বা স্মৃতিসৌধটুকুও বসেনি। এলাকার কিছু মানুষ চাঁদা তুলে কয়েকটি অনুষ্ঠান করে কবিকে মনে রেখেছেন। তা-ও টাকার অভাবে সে সব বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। পাঁতিহালের বাসিন্দা তথা কবি বিষ্ণু দে জন্ম শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সম্পাদক দেবাশিস ঘোষ বলেন, “এলাকার মানুষের দাবি, কবির পৈতৃক ভিটায় বিষ্ণু দে নামাঙ্কিত একটি সাংস্কৃতিক নাট্যমঞ্চ তৈরি হোক এবং বড়গাছিয়া থেকে সিংহবাহিনী মন্দির পর্যন্ত রাস্তাটি ফিডার রোডের নাম বদলিয়ে কবি বিষ্ণু দে রোড নামকরণ হোক। এ ব্যাপারে আমরা দীর্ঘ দিন আগে জেলা পরিষদে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।”
১৯০৯ সালে ১৮ জুলাই কলকাতার টেমার লেনে মামার বাড়িতে বিষ্ণু দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে ৩ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। পূর্বপুরুষের ব্যবসার সুবাদে জগৎবল্লভপুর পাঁতিহালের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন কবি। স্থানীয় মানুষ জানালেন, কবি শেষ বার পাঁতিহালে এসেছিলেন ১৯৫৭ সালে, শিল্পী যামিনী রায়কে সঙ্গে নিয়ে। আশির দশকের শেষের দিকে বিষ্ণু দে-র পৈতৃক ভিটায় গ্রামবাসীদের উদ্যোগে বেসরকারি ভাবে তৈরি হয়েছিল বিষ্ণু মঞ্চ। এই মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও পাঁচ বছর ধরে মঞ্চস্থ হয়েছিল কলকাতার নামী-দামি নাট্যোগোষ্ঠীর নাটক। নাট্যোৎসবও হয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে সে সব আজ বন্ধ। কবির পৈতৃক ভিটায় ঢোকার মুখে স্মৃতিবিজড়িত সেই তোরণটি জরাজীর্ণ।
পঞ্চায়েতের প্রধান বিমল চক্রবর্তী বলেন, “বিষ্ণু দে-র স্মৃতিরক্ষার্থে কিছু করার জন্য আলোচনা চলছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি কিছু করা যাবে না। হাওড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি করবী ধূল অবশ্য বলেন, “পাঁতিহালে বিষ্ণু দে-র ভিটায় বিষ্ণু মঞ্চ তৈরি এবং সেই সঙ্গে রাস্তাটির নামকরণ করার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা চলছে।”