তৃণমূল অফিসে ঢুকে নেতাকে গুলি ব্যারাকপুরে

সোদপুরের পরে ব্যারাকপুর। ফের শাসক দলের স্থানীয় কার্যালয়ে ঢুকে গুলি চালিয়ে পালাল দুষ্কৃতীরা। সোদপুরের তৃণমূল অফিসে দলীয় কর্মীকে গুলি করে মেরেছিল আততায়ীরা। আর বুধবার ব্যারাকপুরের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এলাকার তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০২:৪৪
Share:

সোদপুরের পরে ব্যারাকপুর। ফের শাসক দলের স্থানীয় কার্যালয়ে ঢুকে গুলি চালিয়ে পালাল দুষ্কৃতীরা। সোদপুরের তৃণমূল অফিসে দলীয় কর্মীকে গুলি করে মেরেছিল আততায়ীরা। আর বুধবার ব্যারাকপুরের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এলাকার তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

Advertisement

সোমবার বিকেলে সোদপুরের স্বদেশি ভবনে তৃণমূল অফিসে দলীয় কর্মী বাপ্পা বলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার দু’দিনের মধ্যে ফের ব্যারাকপুরের সদর বাজারের নয়াবস্তি এলাকায় পার্টি অফিসের মধ্যেই আক্রান্ত হলেন রবীনবাবু। পরপর এই ধরনের ঘটনায় ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বাপ্পা খুনে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল সিন্ডিকেট-কাজিয়ার দিকেই। রবীনবাবু পেশায় ব্যারাকপুর আদালতের আইনজীবী। তাঁকে কেন গুলি করা হল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

ঠিক কী ঘটেছিল বুধবার রাতে?

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাত ৮টা নাগাদ জনা সাতেক দুষ্কৃতী পার্টি অফিসের সামনে এসে বোমাবাজি শুরু করে। রবীনবাবু দলীয় দফতরেই ছিলেন। বোমার শব্দ শুনে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। দুষ্কৃতীরা সেখানে ঢুকে তাঁকে গুলি করে। তিনটি গুলি তাঁর গায়ে লাগে। দুষ্কৃতীরা কিছু ক্ষণ ওই পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে হো চি মিন সরণি ধরে হেঁটে চলে যায়। স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত রবীনবাবুকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাঁকে কলকাতায় ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পুলিশি সূত্রের খবর, দুষ্কৃতীরা চারটি গুলি ছুড়েছিল। তিনটি লেগেছে রবীনবাবুর গায়ে। একটি হৃৎপিণ্ডের কাছে, একটি কোমরে, অন্যটি তাঁর পায়ে লেগেছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। ঘটনাস্থলের কাছেই বাজার। সন্ধ্যার পরে সেখানে প্রচুর জনসমাগম হয়। কিন্তু এ দিন ঘটনার পরেই সদর বাজার এলাকা সুনসান হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পিকেট বসেছে।

সিন্ডিকেট ব্যবসা এবং সেই সূত্রে দাদাগিরি নিয়ে রেষারেষিতে দমদম থেকে সোদপুর সন্ত্রস্ত। সোদপুরে তৃণমূলকর্মী খুনের পিছনে সিন্ডিকেট ব্যবসার কাজিয়াই দায়ী বলে খবর। সিন্ডিকেট-দাদাদের রাশ না-টানলে অশান্তি বাড়তে থাকবে বলে শাসক দলের তরফে মঙ্গলবারেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। তার পরের দিনই ফের গুলি তৃণমূলের অফিসে।

রবীনবাবুর উপরে হামলা কেন?

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, শাসক দলের গোষ্ঠী-বিবাদই এই আক্রমণের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই রবীনবাবুর সঙ্গে এলাকার অন্য তৃণমূল নেতা শিবু যাদবের বিবাদ চলছে। বছরখানেক আগে মণিরামপুর সদর বাজার এলাকায় ওই দুই নেতার অধীন দুই গোষ্ঠীর প্রায় ১২ ঘণ্টার লড়াইয়ে সাধারণ মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়েন। সে-বার শিবুর লোকজন রবীনবাবুর উপরে চড়াও হয়েছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, শিবু তৃণমূলেরই এক বিধায়কের ঘনিষ্ঠ। আর রবীনবাবু তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ভোটের পরে মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে শিবু এখন জেল-হাজতে। তার পর থেকেই তাঁর দলবল ফের গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছিল। এ দিনের ঘটনা দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের জের কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। পুলিশ তদন্ত করছে। হামলায় কারা জড়িত, জানা যায়নি।” এই হামলা শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের ফল কি না, জানতে চাওয়া হলে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “এ-সব গল্প তৈরি করা হচ্ছে। এতে কোনও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব নেই।” রাতে হাসপাতালে রবীনবাবুকে দেখে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে তিনি অভিযোগ করেন, সিপিএমের মদতেই সমাজবিরোধীরা হামলা চালিয়েছে। পিছনে আছে বিজেপি-ও। তিনি বলেন, “যারা গুলি চালিয়েছে, রবীনবাবু আহত অবস্থাতেই তাদের নাম পুলিশকে জানিয়েছেন।” আর ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহ বলেন, “গুলির খবর পেয়েছি। ঠিক কী ঘটেছে, খতিয়ে দেখছি।”

দলের নেতা-কর্মীরা বারবার কেন আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলে তার বিহিত চান হাসপাতালে জড়ো হওয়া তৃণমূলকর্মীরা। মুখে তর্জনী ঠেকিয়ে তাঁদের চুপ করার ইঙ্গিত দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান মুকুলবাবুরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন