দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতী, দুশ্চিন্তায় চুঁচুড়াবাসী

খোদ জেলা সদরে পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। কখনও ভোরে হাঁটতে বেরিয়ে বৃদ্ধার হার ছিনতাই করে তাঁকে খুন করে পালাচ্ছে। কখনও প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে গুলি বিনিময়। দিনেদুপুরে একের পর এক ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ঘটনা ঘটার পরে পুলিশ আসে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় কোথায়?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০২:০১
Share:

খোদ জেলা সদরে পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। কখনও ভোরে হাঁটতে বেরিয়ে বৃদ্ধার হার ছিনতাই করে তাঁকে খুন করে পালাচ্ছে। কখনও প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে গুলি বিনিময়। দিনেদুপুরে একের পর এক ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ঘটনা ঘটার পরে পুলিশ আসে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় কোথায়?

Advertisement

বুধবার, নববর্ষের সকালে শহরের মিলন সিনেমার কাছে প্রকাশ্য দিবালোকে দু’দল সমাজবিরোধীর মধ্যে গুলির লড়াই হয়। গণপিটুনিতে মারা যায় এক জন। এক জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কলকাতায় নার্সিংহোমে। চোখের সামনে ওই ঘটনা দেখে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। ঘটনার ওই ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে নিহতের পরিচয় জানতে পেরেছে পুলিশ। তার নাম পরিতোষ রায় (২৬)। বাড়ি চুঁচুড়ারই কোদালিয়া ১ পঞ্চায়েতের বিদ্যাসাগর কলোনিতে। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করত সে। পুলিশের খাতায় আগে কোনও অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। গুলিচালনার ঘটনায় সে কী ভাবে জড়িয়ে পড়ল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

কিন্তু পয়লা বৈশাখ ওই ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের দফতর, জেলা আদালত, জেলা পরিষদ ভবন। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের বাসস্থানও ওই এলাকাতেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এই রকম একটা জায়গায় দিনের পর দিন দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়ায় কী ভাবে? পুলিশ কবে নড়ে বসবে?

Advertisement

গত মার্চ মাসের এক ভোরে প্রাতর্ভ্রমণে বেরনো এক বৃদ্ধার গায়ের গয়না ছিনতাইয়ের পরে তাঁকে নৃশংস ভাবে খুন করে পালায় দুষ্কৃতীরা। চুঁচুড়ার কামারপাড়ায় অন্য এক বৃদ্ধার মাথায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হাতের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। কিছু দিন আগে শহরের কামারপাড়ায় টাকার বখরা নিয়ে গোলমালে এক দুষ্কৃতীকে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে তারই সঙ্গীরা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের মদতপুষ্ট। বহু ক্ষেত্রেই তারা দাদাগিরি চালিয়ে এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ চোখ বন্ধ করে থাকে। চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের এক দুষ্কৃতীর তাণ্ডবে ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। ভয়ে কেউ টুঁ শব্দ করতে সাহস পান না।

এলাকাবাসীর বক্তব্য, কোনও ঘটনা ঘটলে রুটিন মাফিক পুলিশ আসে। খাতা-পেন নিয়ে লেখালেখি করে ফিরে যায়। সমাজবিরোধীরা ধরা পড়ে না। দুষ্কর্ম বন্ধ হয় না। কয়েক মাস আগে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে ব্যান্ডেলে প্রতিবাদ সভা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে দাঁড়িয়ে পুলিশকর্তাদের সামনেই শাসক দলের বিধায়ক তপন মজুমদার অভিযোগ করেছিলেন, পুলিশের একাংশের সঙ্গে যোগসাজসের কারণেই দুষ্কর্ম চলতে থাকে। পুলিশকর্তারা অবশ্য সেই অভিযোগ মানেননি। ওই প্রতিবাদ সভার কিছু দিন পরেই ব্যান্ডেলের কৃষ্ণপুর বাজারে ভরসন্ধ্যায় দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে গুলির লড়াই হয়। তাতে এক দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়। সে সময়ে স্কুলের বই কিনতে আসা এক কিশোরীও গুলিতে আহত হয়।

কি বলছে পুলিশ?

ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) দেবশ্রী সান্যাল বলেন, “প্রায় সব ঘটনাতেই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়ছে। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়েই ফের অপরাধমূলক কাজ করছে। তবে পুলিশ নিরাপত্তা বাড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। পয়লা বৈশাখের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন