জলমগ্ন সোদপুর স্টেশন রোড। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
রাজ্যে বর্ষার প্রথম দিনেই জলমগ্ন হয়ে পড়ল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা। ঘণ্টা দুয়েকের বৃষ্টিতেই কামারহাটি, পানিহাটি, সোদপুর, বরাহনগর, টিটাগড়-সহ বহু এলাকার কোথাও এক কোমর, কোথাও বা এক হাঁটু জল। বিটি রোডের একাংশেও জল জমে যানচলাচল ব্যাহত হয়। তবে এই অবস্থার জন্য এলাকায় চলা নিকাশির কাজের ঢিলেমিকেই দায়ী করেছেন পুরকর্তারা।
বুধবার সকালে টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে কামারহাটি পুরসভার একাধিক এলাকা জলে ডুবে যায়। রামগড়, আড়িয়াদহ, ফিডার রোড, গ্রাহাম রোড, জয়শ্রীনগর, বেলঘরিয়া পঞ্চাননতলা, শীতলাতলা স্ট্রিট এলাকায় হাঁটুজল জমে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার নিকাশি নালাগুলি ঠিক মতো সাফাই না হওয়ার কারণে অল্প বৃষ্টি হলেও জল জমে যাচ্ছে। আড়িয়াদহের বাসিন্দা ঝন্টু পাল বলেন, “নর্দমাগুলি বুজে গিয়েছে। তাই সকালের অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। বড় রাস্তায় যাওয়ার উপায় নেই। এমনকী জরুরি কাজ থাকলেও বাড়ি থেকে বেরোনো যাচ্ছে না।”
শুধু পাড়ার ভিতরেই নয়। কামারহাটি পুর-এলাকায় বিটি রোডের একাংশেও জল জমে যায়। কয়েক দিন আগেই কামারহাটি ও পানিহাটির সীমানা এলাকায় সিইএসসি-র কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়েছিল। তা মেরামতির আগেই বৃষ্টি হওয়ায় ওই সব গর্তে জল জমে গিয়েছে। ফলে জমা জলে গর্তের ব্যাপ্তি বুঝতে না পেরে ধীর গতিতে দুলকি চালে চলছে যানবাহন। আবার রাস্তা খারাপ থাকায় অনেক গাড়িই বিটি রোড থেকে নীলগঞ্জ রোডে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের গোপাল সাহা অবশ্য এলাকায় জল জমার জন্য কেএমডিএ-র ঢিলেমিকেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, “জল জমে মানুষের সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টির জল বেরোনোর জন্য যে সমস্ত নালাগুলি রয়েছে, সেখানে সাফাইয়ের কাজ চলছে। কিন্তু সেই কাজ চলছে গত দু’বছর ধরে। এত দেরি কেন হচ্ছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলেছি।” কামারহাটি পুরসভা সূত্রের খবর, নিকাশি নালাগুলি সাফাইয়ে সুবিধার জন্য নালার কয়েকটি জায়গায় অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির জল সেখান থেকেও উপচে যাচ্ছে রাস্তায়। গোপালবাবু জানান, কামারহাটি এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা পুরোপুরি ভাবে বাগজোলা খালের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সেখানেও কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। বেদিয়া পাড়ার কাছে মেট্রো রেলের কাজের জন্য খালে মাটি পড়ে বুজে গিয়েছে। সেচ দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, বাগজোলা খালে যে অংশে সমস্যা হচ্ছে, সেই জায়গাগুলিতে দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে।
বৃষ্টির জেরে পানিহাটির অবস্থাও খারাপ। এইচ বি টাউন, শ্যামশ্রীনগর, গৌরাঙ্গনগর, রামকৃষ্ণপল্লি, পানিহাটি হাসপাতাল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমেছে। পানিহাটি পুরসভা সূত্রের খবর, এলাকায় কেএমডিএ-র পাইপলাইনের কাজের জন্য সমস্ত রাস্তা খোঁড়া হয়েছে। বৃষ্টির জলে ধুয়ে মাটি নর্দমায় পড়ছে। আবার পুর-এলাকার নিকাশির কাজও শেষ হয়নি। সব মিলিয়ে বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে এলাকা। সেই সঙ্গেই যে সমস্ত জায়গায় গর্ত বোজানো হয়নি, সেখানে ভাঙা রাস্তায় চলতে গিয়ে পড়ে বিপদও ঘটছে।
পানিহাটির চেয়ারম্যান স্বপন ঘোষ বলেন, “জল নামানোর জন্য পাঁচটি পাম্প চালানো হয়েছে।” পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেন, “সোদপুর, খড়দহ এলাকাতেও সমস্যা রয়েছে। ৩৪ বছরে এখানে নিকাশির কোনও কাজ হয়নি। আমরা কাজ শুরু করেছি। তবে পঞ্চায়েত, পুরসভা ও লোকসভা নির্বাচন পার করতেই অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। তাই কাজ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। আশা করি আগামী বর্ষায় এই সমস্যা আর থাকবে না।” সোদপুর স্টেশন রোড, টিটাগড়, খড়দহের বেশ কিছু এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পানীয় জলের কলও চলে যায় জলের তলায়। বুধবার রাত এই সমস্যা চলেছে।
অন্য দিকে বাগজোলা খালের সংস্কারের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় জলে ডুবে গিয়েছে বরাহনগরের একাধিক এলাকা। লেকভিউ পার্ক, সতীন সেন নগর, শীতলামাতা কলোনি, কালীমাতা কলোনি, গোপাললাল ঠাকুর রোড, নৈনানপাড়া, বরাহনগর বাজার, ভট্টাচার্য পাড়া, ডানলপ-সহ বিভিন্ন এলাকায় জল জমেছে। বরাহনগর পুরসভার তরফে জল নামানোর জন্য কয়েকটি পাম্পও লাগানো হয়েছে।