ফেসবুকের বন্ধুদের ‘মুখোমুখি’ সুভাষিণী

এক মাসের মধ্যে ফেসবুকে বন্ধু হয়েছেন ১১ হাজার ৬৫৮ জন। তাঁদের মধ্যে সরাসরি কথা বলতে পেরেছেন ৪ হাজার ৮৪২ জনের সঙ্গে। কিন্তু সবার সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করে কথা বলার ইচ্ছেটা ছিল। তাই রবিবার নৈহাটির ঐকতান মঞ্চে হাজির হলেন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলি।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৭
Share:

এক মাসের মধ্যে ফেসবুকে বন্ধু হয়েছেন ১১ হাজার ৬৫৮ জন। তাঁদের মধ্যে সরাসরি কথা বলতে পেরেছেন ৪ হাজার ৮৪২ জনের সঙ্গে। কিন্তু সবার সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করে কথা বলার ইচ্ছেটা ছিল। তাই রবিবার নৈহাটির ঐকতান মঞ্চে হাজির হলেন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলি। ফেসবুকের বন্ধুদের সঙ্গে ‘ফেস টু ফেস’ অর্থাত্‌ মুখোমুখি হবেন বলে।

Advertisement

রবিবার যারা সুভাষিণীর সঙ্গে কথা বলার জন্য জড়ো হয়েছিলেন ওই মঞ্চে, তাঁদের বেশিরভাগই কোনও দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। সকলেই সুভাষিণীর ‘ফেসবুক ফ্রেন্ড’। তাঁরা একের পর এক প্রশ্ন করেন ব্যারাকপুরের প্রার্থীকে। যথাসাধ্য জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন নেত্রী।

দলীয় কর্মসূচী আর উন্নয়ন পরিকল্পনার লম্বা তালিকা দিয়ে জনসংযোগ করার প্রক্রিয়া বেশ পুরনো হয়ে গিয়েছে, তা বুঝতে পারছে বামেরাও। তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে জনমত তৈরি করায় উদ্যোগী তাঁরাও। গত ৮ মার্চ, নারী দিবসের দিন এই রাজ্যে আসেন সুভাষিণী। তার আগেই জনসংযোগ বাড়াতে ফেসবুক পেজটি খোলেন তিনি। বললেন, “সবাইকে জানিয়েছিলাম, মুখোমুখি কথা বলতে চাই। শুনতে চাই ওঁদের কথা।’’ আর তাই এ দিনের মুখোমুখি কথা বলার জন্যও অন্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ফেসবুকেই। অনুষ্ঠানের নামও দিয়েছেন নিজে পছন্দ করে।

Advertisement

সময় দিয়েছিলেন বেলা ১টায়। তবে সাড়ে ১২টা থেকে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাঁর ‘বন্ধুরা’। কিন্তু আসতে সামান্য দেরি হল। দেড়টা থেকে শুরু হল কথাবার্তা। মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে কথা শুরু করলেন তিনি। সামনে প্রায় আড়াইশো লোক। তবে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা ওই সাক্ষাত্‌কারে প্রশ্ন করতে পারলেন সাকুল্যে ১৬ জন। উঠে এল গত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের খারাপ ফল থেকে শুরু করে রাজ্যে ঘটে চলা একের পর এক নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ।

শ্রোতাদের মধ্যে থেকে এক যুবক প্রশ্ন করলেন, বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের অত খারাপ ফলের পর কী করে আশা করছেন লোকসভায় জেতার? সুভাষিণীর সহাস্য উত্তর, “তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলে রাজ্যের যে কোনও উন্নয়ন হবে না, তা মানুষ বুঝতে পেরেছেন। তাই আশাবাদী আমরা।”

অনেকে আবার প্রশ্ন করলেন, বাম মহিলা সংগঠনের সর্বভারতীয় নেত্রী হিসেবে রাজ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনায় নিজের কী ভূমিকা হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি? বর্ষীয়াণ নেত্রীর উত্তর, “আমি এখানে সাংসদ প্রার্থী। ভোটের জন্য রাজনৈতিক বক্তব্য রাখার মঞ্চ এটা নয়। তাই জিতি বা হারি, যেখানেই থাকি না কেন, নারী হিসেবে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ সব সময়ে করে যাব।” তাঁর দাবি, এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা মোটেও সদর্থক নয়। গুরুত্ব দিয়ে অভিযোগও শোনা হয়নি।

ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এল সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরোধিতা করা বা তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিমুখী করে তোলার মতো নানা প্রসঙ্গ। অনেকে আবার জেতার জন্য সুভাষিণীর পরিকল্পনা কী জানতে চাইলেন। সব কিছুই সামলালেন প্রার্থী।

কেমন লাগল এই ‘ফেস টু ফেস’? পৌনে তিনটেয় কথাবার্তা শেষ করে গাড়িতে উঠতে উঠতে সুভাষিণীর উত্তর, “এই ধরনের সাক্ষাত্‌কার দু’পক্ষের জন্যই খুব উত্‌সাহব্যাঞ্জক। এমন অরাজনৈতিক আলোচনায় সমাজের বিভিন্ন সমস্যাগুলো স্পষ্ট ভাবে সামনে আসে। সেগুলো সমাধানের রাস্তাও আলোচনার মাধ্যমেই খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষ যে এত প্রশ্ন করেছেন, তাতে আমার খুব ভাল লেগেছে। এটাই আমাকে প্রেরণা দিচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন