মণ্ডপে হাজির হয়ে স্বামীর বিয়ে রুখলেন নির্যাতিতা

শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কন্যাসন্তানকে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন স্ত্রী। সেখানেই খবর পান, স্বামী ফের বিয়ে করছে। বিয়ে আটকাতে সাত তাড়াতাড়ি মেয়েকে নিয়ে হাজির হন সরাসরি বিয়ের আসরে। হঠাৎই বিয়ের আসরে মেয়ে কোলে আগের স্ত্রীকে দেখে কিছুটা হকচকিয়ে যান স্বামী। হতবাক হয়ে যান হবু কনেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৬:১৭
Share:

শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কন্যাসন্তানকে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন স্ত্রী। সেখানেই খবর পান, স্বামী ফের বিয়ে করছে। বিয়ে আটকাতে সাত তাড়াতাড়ি মেয়েকে নিয়ে হাজির হন সরাসরি বিয়ের আসরে। হঠাৎই বিয়ের আসরে মেয়ে কোলে আগের স্ত্রীকে দেখে কিছুটা হকচকিয়ে যান স্বামী। হতবাক হয়ে যান হবু কনেও। কারণ তাঁর হবু বরের যে আগে একবার বিয়ে হয়েছে এবং স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সও হয়নি, তা জানতেনই না হবু বউয়ের বাড়ির লোকেরা। বিয়ের আসরে সব জানাজানি হয়ে যাওয়ায় নিমেষে গা ঢাকা দেয় বরযাত্রীরা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি বরের ও তার মায়ের। পুলিশ ডেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় দু’জনকে। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে বাদুড়িয়ার যদুরহাটি গ্রামের ওই ঘটনায় ধৃতদের নাম দেবাশিষ ঘোষ ও আরতি ঘোষ। তাদের বাড়ি হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় বাস কন্ডাক্টর দেবাশিস ২০০৯ সালে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার জঙ্গলআটি গ্রামের লক্ষ্মী কাহারকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে তাঁর উপর অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। এমনকী শাশুড়ি তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীদেবী। এরপর ২০১১ সাল নাগাদ মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন লক্ষ্মীদেবী।

ইতিমধ্যে বাসেই দেবাশিসের সঙ্গে পরিচয় হয় বাদুড়িয়া থানার যদুরহাটি গ্রামের ওই তরুণীর। দেবাশিস ওই তরুণীর বাড়িতে ঘরজামাই হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিয়ের দিনক্ষণও ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু কোনওভাবে লক্ষ্মীদেবী জানতে পারেন, মিথ্যা কথা বলে ফের বিয়ে করতে যাচ্ছে স্বামী। এর পর রবিবার মেয়েকোলে সরাসরি বিয়ের মণ্ডপে হাজির হন লক্ষ্মীদেবী। সেখানে ফাঁস করে দেন স্বামীর কীর্তি। ততক্ষণে অবশ্য বিয়ে প্রায় শেষ হওয়ার জোগাড়। লোকজনের খাওয়াদাওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আচমকা এই ঘটনায় সব থেমে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বরযাত্রীরা গা ঢাকা দেন। বর ও তার মা’ও পালাতে গেলে তাদের ধরে ফেলেন বিয়ে বাড়ির লোকজন। হবু কনের বাবা অভিযোগ করেন বাদুড়িয়া থানায়। পুলিশ এসে গ্রেফতার করে তাদের। ওই তরুণীর বাবা বলেন, “সাধ্যমতো বিয়ের আয়োজন করেছিলাম। অনেকেই চলে এসেছিলেন। আগে জানলে কি এমন হত! লক্ষ্মীদেবী এসে সমস্ত ঘটনা না জানালে মেয়ের বড় ক্ষতি হয়ে যেত। উনি আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে দিলেন।” বিয়ে ভণ্ডুল হয়ে গেলেও লক্ষ্মীদেবীকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন হবু কনেও। তাঁর কথায়, “ উনি সত্যিই আমার কাছে লক্ষ্মী হয়েই এসেছেন। দেবাশিস যে প্রতারণা করতে পারে, আগে বুঝিনি।” আর কি বলছেন লক্ষ্মীদেবী?

Advertisement

স্বামীর কীর্তি ফাঁস করে একটি মেয়ের জীবন রক্ষার পর তিনি বলেন, “শ্বশুরবাড়িতে ওরা আমাকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। তাই আবার অন্য মেয়ের সর্বনাশ হতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে চুপ করে বসে থাকতে পারিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন