খুন-জখম, বোমাবাজি তো লেগেই রয়েছে। তার সঙ্গে এ বার হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়া এবং সংলগ্ন এলাকায় চুরিও বেড়ে চলেছে। গত কয়েক দিনে রাস্তা থেকে অন্তত ১০-১৫টি সাইকেল, তিনটি মোটরবাইক এমনকী গাড়িও উধাও হয়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতীদের নজর থেকে বাদ যাচ্ছে না সাধারণ মানুষের বাড়িও। বারান্দায় রাখা জামাকাপড় থেকে শুরু করে ঘরের দরজার তালা ভেঙে ঢুকে জলের কলও চুরি করছে দুষ্কৃতীরা।
এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে আগেই মানুষ আতঙ্কিত ছিলেন। এ বার ছিঁচকে চুরিও বেড়ে চলায় সেই আতঙ্ক অন্য মাত্রা পেয়েছে। নিজেদের মোটরবাইক, সাইকেল নিয়ে দোকান-বাজারে বেরিয়েও মানুষ স্বস্তি পাচ্ছেন না। পুলিশ যথারীতি টহলদারি বাড়ানো এবং দুষ্কৃতীদের খোঁজে জোরদার তল্লাশির আশ্বাস দিলেও সাধারণ মানুষের ভরসা বাড়ছে কই?
পুলিশের দাবি, প্রায় দু’মাস ধরে ভোট-পর্ব চলায় পুলিশকর্মীরা সেই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অন্য জেলাতেও তাঁদের ভোটের কাজে যেতে হয়। সেই সুযোগটাই নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ইতিমধ্যে কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিছু জিনিসও উদ্ধার হয়েছে। একটিই চক্র ওই কাজে যুক্ত বলে পুলিশের অনুমান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু জানান, মোটরবাইকে পুলিশ টহল বাড়ানো হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের বেশির ভাগই গঙ্গার ও পারের নৈহাটি, গড়িফা, জগদ্দল এলাকা থেকে নৌকা করে চুঁচুড়া ঘাট, বাঁশবেড়িয়া ঘাট, ডানলপ-সাহাগঞ্জ ঘাট এবং হুগলি ঘাট হয়ে শহরে ঢুকছে। অপরাধ করে ফিরে যাচ্ছে। ফলে, তাদের ধরতে সমস্যা হচ্ছে। ঘাটগুলিতেও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।
গত ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় চুঁচুড়ার কামারপাড়ার রাস্তায় এক বৃদ্ধার মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করে তাঁর টাকার ব্যাগ ছিনতাই করে পালায় দুষ্কৃতীরা। পরের দিন ভোরেই নারকেলবাগান এলাকায় প্রাতর্ভ্রমণে বেরনো এক বৃদ্ধাকে মাথা থেঁতলে, হাত-পা ভেঙে খুন করা হয়। জখম হন আর এক বৃদ্ধা। তাঁদের ‘অপরাধ’, তাঁরা হার ছিনতাইয়ে বাধা দিয়েছিলেন। এই ঘটনার এক মাসের মধ্যেই প্রকাশ্য দিবালোকে রবীন্দ্রনগর এলাকায় দু’দল দুষ্কৃতীর গুলির লড়াই বাধে। এক জন গুলিতে নিহত হন। এক জন গুলিবিদ্ধ হন।
এই সব ঘটনার পুলিশি-তদন্তের মধ্যেই শহর জুড়ে বাড়তে থাকে চুরি। গত মাসেই ধরমপুর এলাকার একটি পরিবার পুরী বেড়াতে যান। চার দিন পরে ফিরে দেখেন, দরজার তালা ভাঙা। ভিতরের জিনিস লন্ডভন্ড। খোয়া গিয়েছে বেশ কিছু জিনিস। এমনকী, জলের কলও। দিন কয়েক আগে একই ভাবে প্রিয়নগর এলাকার এক ব্যক্তির বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা তালা ভেঙে ঢোকে। সেখান থেকে টিউবলাইটও চুরি যায়। তছনছ করা হয় আসবাব।
ওই এলাকার অনেকের অভিযোগ, মহল্লার শেষ প্রান্তের আমবাগানে সন্ধ্যার পরে এক দল যুবকের আনাগোনা বাড়ছে এবং জুয়ার আড্ডা বসছে বেশ কিছু দিন ধরে। পুলিশে অনেক বার জানিয়েও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই দলের অনেকে চুরির ঘটনায় যুক্ত থাকতে পারে বলে তাঁদের সন্দেহ।
সবচেয়ে বেশি বাড়ছে মোটরবাইক ও সাইকেল চুরি। ইতিমধ্যে দু’টি সাইকেল চুরির অভিযোগ থানায় দায়ের হয়েছে। কিন্তু তার বাইরেও কত যে সাইকেল চুরি হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। অনেকেই এ নিয়ে থানা পর্যন্ত যান না। সাইকেল আরোহীদের বক্তব্য, মিষ্টির বা ওষুধের দোকানের সামনে থেকেই মূলত সাইকেল খোয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরেই খাদিনা মোড়ের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে থেকেও সাইকেল চুরি যায়।
গত মঙ্গলবার রাতে মল্লিক কাসেম হাট এলাকা থেকে বাজার করতে আসা এক ব্যক্তির মোটরবাইক চুরি যায়। পরে দিন বিকেলে রবীন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা তপন সমাজপতি মোটরবাইক নিয়ে চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ের একটি দোকানে ছেলের জামাকাপড় কিনতে যান। দোকান থেকে বেরিয়ে দেখেন বাইক উধাও। তাঁর কথায়, “কারা চুরি করল কিছুই বুঝতে পারিনি। ছেলের জামা-প্যান্ট কিনতে গিয়েছিলাম। দশ মিনিটেই কেনা হয়ে যায়। তার মধ্যেই বাইক চুরি হয়ে গেল!”
গত সপ্তাহে ভদ্রেশ্বরের এক পরিবহণ ব্যবসায়ী নিজের ছোট ট্রাকটি সারানোর জন্য খাদিনা মোড় এবং তালডাঙার মধ্যবর্তী এলাকার একটি গ্যারাজে নিয়ে যান। ট্রাকটি রেখে পাশের হোটেলে খেতে ঢোকেন তিনি। তাঁর কথায়, “হোটেল থেকে বেরিয়ে আর ট্রাকটি দেখতে পাইনি। থানায় অভিযোগ জানাই। এখনও ট্রাকের হদিশ নেই।” এমন চুরির উদাহরণ আরও রয়েছে।