হুগলিতে ব্যবধান বাড়িয়ে রত্নার দাবি, সততার জয়

পাশে রয়েছে ধনেখালি, পাশে রয়েছে সিঙ্গুরও। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের দু’প্রান্তের দুই বিধানসভা কেন্দ্র। একটিতে তাঁর দলের বিরুদ্ধে রয়েছে লাগাতার সন্ত্রাস এবং দলীয় কর্মীর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে নানা চাপান-উতোর।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০২:৪৩
Share:

সাফল্যের হাসি। ছবি: তাপস ঘোষ।

পাশে রয়েছে ধনেখালি, পাশে রয়েছে সিঙ্গুরও।

Advertisement

হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের দু’প্রান্তের দুই বিধানসভা কেন্দ্র। একটিতে তাঁর দলের বিরুদ্ধে রয়েছে লাগাতার সন্ত্রাস এবং দলীয় কর্মীর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে নানা চাপান-উতোর। অন্যটিতে জমি-সমস্যার গ্রহণযোগ্য কোনও সমাধান এখনও না হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ।

ভোটের লড়াইয়ে এই দুই কাঁটা কপালে ভাঁজ ফেলেছিল হুগলি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগের। কিন্তু শুক্রবার লোকসভা ভোটের ফল জানিয়ে দিল, ওই দুই বিধানসভার মানুষ তাঁর পাশেই রয়েছেন। লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভাতেই এগিয়ে তাঁর দল। গত বারের চেয়ে জয়ের ব্যবধান বাড়িয়ে এ বারও হুগলি কেন্দ্রে ক্ষমতা ধরে রাখল তৃণমূল। রত্নাদেবী জিতলেন ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫৮ ভোটে (গতবার ভোটের ব্যবধান ছিল ৮১ হাজার ৫২৩)।

Advertisement

চতুর্মুখী লড়াইয়ে রত্নাদেবীকে লড়তে রয়েছে বিজেপির চন্দন মিত্র, সিপিএমের প্রদীপ সাহা এবং কংগ্রেস প্রার্থী প্রীতম ঘোষের বিরুদ্ধে। কিন্তু রত্নাদেবী ঘনিষ্ঠ মহলে বারবার জানিয়েছেন, তাঁর ভাবনা ধনেখালি এবং সিঙ্গুর নিয়ে। গত বছরের গোড়ায় ধনেখালিতে দলীয় কর্মী কাজি নাসিরুদ্দিনের পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে শোরগোল হয় রাজ্যে। ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। কয়েক মাস আগে তদন্তভার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআইয়ের হাতে যায়। তার পরেও ধনেখালি শান্ত থাকেনি। কখনও দলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ সামনে এসেছে। কখনও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।

অন্য দিকে রয়েছে সিঙ্গুর। তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি ফেরতের ঙ্গীকার করলেও তা এখনও হয়নি। গোটা বিষয়টিই এখনও সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।

তাই এই দু’জায়গার মানুষ তাঁকে ফেরাবেন কি না, তা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন রত্নাদেবী। কিন্তু এ দিন গণনার প্রতিটি রাউন্ডে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা যত বেড়েছে, তত আনন্দে মেতেছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। দিনের শেষে রত্নাদেবী বলেন, “সততার জয় হল। সারা বছর আমি মানুষের সঙ্গে থেকেছি। মানুষের জন্য কাজ করেছি। আজকে মানুষ কাজের প্রতিদান হিসেবে রায় দিয়েছেন।” দলের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, শুধু কাজই নয়, এই কেন্দ্রে রত্নাদেবীর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, বিপদে-আপদে নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার প্রবণতা তাঁর জয় সহজ করেছে।

বিরোধীরা অবশ্য রত্নাদেবীর জয়কে ‘সন্ত্রাসের জয়’ বলেই কটাক্ষ করেছে।

সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহা পেয়েছেন ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬০টি ভোট। বিজেপি প্রার্থী চন্দন মিত্র ২ লক্ষ ২০ হাজার ৮৯৮ ভোট এবং কংগ্রেস প্রার্থী প্রীতম ঘোষ ৪২ হাজার ১৭৩টি ভোট। এঁদের মধ্যে চন্দনবাবুই রত্নাদেবীকে সবচেয়ে বেশি বেগ দেবেন বলে অনেকেই ধরেছিলেন। কিন্তু ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল, দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে সিপিএম। চন্দনবাবুকে এ দিন গণনাকেন্দ্রের ধারে-কাছে দেখা যায়নি। বিজেপি-র হুগলি জেলা জেলা সহ-সভাপতি স্বপন পালের দাবি,“সন্ত্রাস করে জিতল তৃণমূল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফল অন্য রকম হত।” একই অভিযোগ কংগ্রেস ও সিপিএমেরও।

যা শুনে হেসে উড়িয়ে দিচ্ছেন রত্নাদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন