৩০ বছর ধরে আবেদনেও সেতু হয়নি ইছামতী বাওড়ে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোপালনগর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৬:৫২
Share:

বছরের পর বছর এই সাঁকো দিয়েই চলছে পারাপার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

তিরিশ বছর ধরে সেতু না থাকায় যাতায়াতের সমস্যায় ভুগে চলেছেন এলাকার মানুষ। বহুবার প্রশাসনের কাছে সেতুর জন্য দাবিও জানিয়েছেন। বলাবহুল্য আজও তা পাননি উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর গোপালনগর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ইছামতী বাওড় এলাকার মানুষ। ফলে সমস্যার সুরাহায় নিজেরাই বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই সাঁকোই তাঁদের ভরসা।

Advertisement

রাজ্য ক্ষমতার পালা বদলের পরে অনেকেই ভেবেছিলেন এ বার হয়তো তাঁদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান কৃণমূলের স্মরজিৎ বৈদ্য এলাকার মানুষের সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “তিরিশ বছর ধরে এই এলাকায় সেতুর সমস্যা রয়েছে। সম্প্রতি পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে সাঁকোটির সংস্কার করা হয়েছে। পাকা সেতু তৈরির আবেদন জানিয়ে বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে চিঠি দিয়েছি।”

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইছামতী নদী থেকেই ইছামতী বাওড়ের সৃষ্টি। স্থানীয় শ্রীপল্লি সেতুর কাছে ইছামতী থেকে বেরিয়ে নতিডাঙায় বাওড়টি শেষ হয়েছে। লম্বায় প্রায় ১০ কিলোমিটার। বাঁশের সাঁকোর এক দিকে খোরা খাল ও অন্য দিকে বালিয়াডাঙা গ্রাম। পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, ১০০ মিটার লম্বা সাঁকোর দু’ধারে মাটি ফেলে আরও ১০০ মিটার পথ তৈরি করা হয়েছে। মূলত সাইকেলে বা হেঁটে মানুষ যাতায়াত করেন। আলাকালিপুর, চারাতলা, নতিডাঙা, খাবরাপোতা, আরামডাঙা-সহ প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষকে এ ভাবেই যাতায়াত করতে হয়। গোপালনগর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও গোপালনগর-২ এবং গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারাও এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য উৎপল সরকার বলেন, “পাকা সেতু না থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় এলাকার সব্জিচাষিদের। কৃষিপ্রধান এই সব এলাকার চাষিরা গোপালনগর হাটে প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার সব্জি নিয়ে আসেন। প্রথমে ভ্যানে বা অন্য যানবাহনে করে চাষিরা বালিয়াডাঙার পাড়ে সব্জি নিয়ে আসেন। তারপর তা মাথায় করে খোরাখালের পাড়ে এনে ফের ভ্যান বা অন্য যানে করে হাটে নিয়ে যান। এতে পরিশ্রম ও অর্থ দুই’ই বেড়ে যায়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই সাঁকোর উপরে নির্ভরশীল। প্রতিবছর বর্ষার আগে আগেই পঞ্চায়েতের তরফে সাঁকো সংস্কার করা হয়।

Advertisement

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, মৎস্যজীবীরা কচুরিপানা পরিষ্কার করে বাওড়ে মাছ ধরার তোড়জোড় করছেন। চাষিরা মাথার করে সব্জি নিয়ে আসছেন। তাঁদেরই একজন জানালেন, “অসুবিধা হলেও এই সাঁকোই ভরসা। কারণ তা না হলে ঘুরপথে হেঁটে আসতে আরও পাঁচ কিলোমিটার পথ বেশি অতিক্রম করতে হয়। এতে বহন খরচরে পাশপাশি সময়ও অনেক লেগে যায়।” বর্ষায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সাঁকো জলের তলায় চলে যায়। তখন নৌকাই একমাত্র উপায়। গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশন, গিরিবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই স্কুলে যাতায়াত করতে পারে না। স্থানীয় বাসিন্দা ও বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “বাম সরকার এখানকার মানুষরে পাকা সেতুর দাবিকে কোনও গুরুত্ব দেয়নি। অথচ ওই সব মানুষের ভোটেই তাঁরা একের পর এক নির্বাচনে জিতেছেন। তবে বর্তমান পূর্তমন্ত্রী পাকা সেতুর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”

জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা মণ্ডলও পাকা সেতু তৈরির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন বলে জানিয়েছেন। এলাকার মানুষের সেতুর দাবি পূরণ হয় কি না সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন