রাজ্যেরও হলফনামা তলব

নির্ভয়ে পুরভোট করাতে কী ব্যবস্থা নিয়েছিল কমিশন, প্রশ্ন হাইকোর্টের

নির্ভয়ে পুরভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের কাছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন আদৌ আবেদন জানিয়েছিল কি না, এ বার সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। পুরভোট নিয়ে জনস্বার্থে দায়ের হওয়া একটি মামলায় শুক্রবার প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর মন্তব্য করেছেন, ‘‘নির্ভয়ে, নিরাপদে ভোট দেওয়ার জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিঃসংশয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন জানায়। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার ভোটে তেমন কোনও বিজ্ঞাপন গণমাধ্যমে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দিয়েছে বলে আমি অন্তত দেখিনি!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ০৩:২১
Share:

নির্ভয়ে পুরভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের কাছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন আদৌ আবেদন জানিয়েছিল কি না, এ বার সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। পুরভোট নিয়ে জনস্বার্থে দায়ের হওয়া একটি মামলায় শুক্রবার প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর মন্তব্য করেছেন, ‘‘নির্ভয়ে, নিরাপদে ভোট দেওয়ার জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিঃসংশয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন জানায়। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার ভোটে তেমন কোনও বিজ্ঞাপন গণমাধ্যমে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দিয়েছে বলে আমি অন্তত দেখিনি!’’

Advertisement

মামলার আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এ দিন আদালতে অভিযোগ করেন, রাজ্য প্রশাসনও অবাধে ভোট করতে সক্রিয় বা উদ্যোগী হয়নি। বিকাশবাবুর অভিযোগ শুনে প্রধান বিচারপতি সরকারি কৌঁসুলি অভ্রতোষ মজুমদার ও নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন, ভাল ভাবে ভোট করতে রাজ্য প্রশাসন কী কী পদক্ষেপ করেছে, তা ৬ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দাখিল করে জানাতে হবে। তার দু’সপ্তাহের মধ্যে তার পাল্টা হলফনামা জমা দেবেন মামলার আবেদনকারীরা। ফের ৮ সপ্তাহ পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে।

এ বারের পুরভোট শাসক দলের বেনজির গা-জোয়ারি এবং অনিয়মের জেরে কালিমালিপ্ত হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। একই সঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় উপযুক্ত ভূমিকা পালন করছেন না বলেও তারা সরব ছিল। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অবাধ ভোট নিশ্চিত না করার অভিযোগ তো ছিলই। কিন্তু সরকার কথা শুনছে না বলে কমিশনার যে ভাবে অসহায়তা প্রকাশ করছিলেন, তা নিয়েও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিল। তাদের যুক্তি ছিল, ভোটারদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব কমিশনের উপরেই বর্তায়। প্রধান বিচারপতির এ দিনের মন্তব্য এবং নির্দেশে তাদের বক্তব্যই মান্যতা পেল বলে মনে করছে বিরোধীরা। কমিশনার সুশান্তবাবু অবশ্য বিচারপতির মন্তব্য নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।

Advertisement

৯২টি পুরসভার ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়নি, এই অভিযোগ তুলে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, প্রিসাইডিং অফিসারেরা জানিয়েছেন, ভোটে হিংসা হয়নি। অথচ নির্বাচন কমিশনার নিজে হিংসার কথা এড়িয়ে যাননি। বিকাশবাবু এ দিন আদালতে জানান, আবেদনকারীকেও ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়। ।

প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘ক’টা বিজ্ঞাপন (ভোটারদের জন্য) দিয়েছেন?’’ আর প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি সংবাধমাধ্যমে দেখেছি, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিজেকে অসহায় বলে মন্তব্য করেছেন! আমার মনে হয়েছিল, ওঁকে ডেকে জিজ্ঞাসা করি, উনি ওই কথা আদৌ বলেছিলেন কি না!’’ প্রধান বিচারপতির মন্তব্য শুনে কমিশনের আইনজীবী নয়নচাঁদ বিহানি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রেই তথ্য বিকৃত করে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।’’

কমিশনের আইনজীবীর এমন দাবি শুনে প্রধান বিচারপতির পরের মন্তব্য, ‘‘নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ না হলে তার প্রভাব পড়ে ভোটদাতাদের উপরে। ভোটদাতাদের মনে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাজ। ভোটদাতারা যাতে বাড়ি থেকে নিঃসংশয়ে বেরিয়ে বুথে গিয়ে ভোট দিয়ে নিরাপদে ফের বাড়ি ফিরতে পারেন, তা নিশ্চিত করা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য।’’

কমিশনের আইনজীবীর কাছে প্রধান বিচারপতি আরও জানতে চান, ‘‘ভোটদাতাদের সুবিধার্থে জাতীয় নির্বাচন কমিশন টোল ফ্রি নম্বর জানিয়ে দেয়। তেমন কোনও নম্বর রাজ্য নির্বাচন কমিশন কি দিয়েছিল?’’ কমিশনের আইনজীবী জানান, নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার জন্য যে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ডিভিশন বেঞ্চকে তা জানানো হবে।

প্রধান বিচারপতির এ দিনের অবস্থানকে স্বাগতই জানিয়েছে বিরোধীরা। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘পুরভোট যে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি এবং জনমতের সঠিক প্রতিফলন সর্বত্র হয়নি, আদালতের এই হস্তক্ষেপে আমাদের সেই অভিযোগই আরও প্রতিষ্ঠিত হল।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘তবে আমরা বলছি, নির্বাচন কমিশন যদি অন্যায় করে থাকে, সেই অন্যায়ে তাদের বাধ্য করেছে রাজ্য সরকার! তারা কখনওই চায়নি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হোক। আদালত সরকারকে হলফনামা দিতে বলায় এই বক্তব্যও গ্রাহ্য হল।’’

বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন! যা বাহিনী এবং যা ব্যবস্থা ছিল, তাতে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয় বলে নিজেই মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ পেয়ে তিনি যথাযথ পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেননি।’’ কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, ‘‘বিধিবদ্ধ এক্তিয়ারের মধ্যেই মীরা পাণ্ডে অধিকার আদায়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। সুশান্তবাবু সেই সাহস দেখাতে পারেননি!’’

মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এক হাত নিয়েছেন বিরোধীদেরই! তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে আদালত কী বলেছে, তা নিয়ে আমাদের মন্তব্য করার কিছু নেই। কিন্তু জনতার আদালতে প্রত্যাখ্যাত হয়েও বিরোধীরা যখন আদালতের মন্তব্যে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে ওঠেন, তখন বুঝতে হবে অন্য পথে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন আছে তাঁদের!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন