এটিএম থেকে ১০০-র নোট পেলেই যুদ্ধজয়

চার বারে ৫০০ করে টাকা তুলে ১০০র নোটে দু’হাজার টাকা তোলা হলো শেষমেশ। ২০ জনের পিছনে লাইনে দাঁড়িয়ে এটিএম থেকে এই টাকা তুলে বেরনোর সময়ে রীতিমতো যুদ্ধজয়ের মেজাজ শ্যামবাজারের অবিনাশ লাহিড়ীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:২৭
Share:

চার বারে ৫০০ করে টাকা তুলে ১০০র নোটে দু’হাজার টাকা তোলা হলো শেষমেশ। ২০ জনের পিছনে লাইনে দাঁড়িয়ে এটিএম থেকে এই টাকা তুলে বেরনোর সময়ে রীতিমতো যুদ্ধজয়ের মেজাজ শ্যামবাজারের অবিনাশ লাহিড়ীর।

Advertisement

মঙ্গলবার রাত ১০টায় চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের কাছের এটিএম থেকে টাকা তুলে বেসরকারি সংস্থার এই কর্মী বললেন, ‘‘কালকের বাজার করার জন্য খুচরো টাকা পকেটে ছিল না। ১০০ টাকার নোটে না তুললে কাল বাড়িতে হাঁড়ি চড়ত না।’’

প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথা ফুরোতে না-ফুরোতেই ভিড় উপচে পড়েছিল এটিএমগুলোর সামনে। তা-ও কত বারে কত টাকা তোলা ঠিক হবে, তা নিয়ে নানা ধন্দ ছিল। কারও আশঙ্কা, একযোগে ৫০০ টাকা তুললে যদি ৫০০র নোটই বেরোয়! স্থানীয় অফিসকর্মী এক তরুণী বলে উঠলেন, ‘‘তা হলে কি ৪০০ টাকা তুলব? এই এটিএমটাতেই তো বহু বার টাকা তুলতে এসে ৫০০ বা ১০০০-এর নোট ছাড়া কিছুই বেরোয়নি।’’

Advertisement

একে লম্বা লাইন। তার উপরে দরকার মাফিক ১০০০ কি ২০০০ করে টাকা দফায় দফায় তুলতে সময় লাগছে ঢের বেশি। তবু লাইন ছেড়ে বেরনোর কারও সাহস নেই। দফায় দফায় ৪০০ কি ৫০০ টাকা তুলতে শহরের নানা প্রান্তে এটিএম বিকল হওয়ার খবরও মিলেছে। রাতের দিকে রানিকুঠির একটি এটিএমের সামনে ভিড়ের চোটে নেতাজি সুভাষ রোড পর্যন্ত যানজট হয়ে যায়। টাকা তুলতে সময় লাগছে বলে রীতিমতো হাতাহাতিও বেধে গেল।

এটিএমের লাইনে নানা সুচিন্তিত মতামতও ভেসে বেড়াচ্ছিল। একজন বললেন, ‘‘কালো টাকা ঠেকাতে গেলে এমন হুট করে পদক্ষেপ ছাড়া গতি কী?’’ শুনে এক তরুণ ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, ‘‘রাখুন মশাই! যাদের সত্যিই কালো টাকা আছে, তারা কি আর বাড়িতে টাকা রাখে? সব টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়। যত
ভোগান্তি আমজনতার।’’

সত্যি তেমনই দশা সন্তোষপুরের বিষ্ণুপ্রিয়া দত্তের। ভদ্রমহিলা প্রায় কাঁদোকাঁদো! সামনেই মেয়ের বিয়ে। গয়না নেবেন বলে এ দিন দুপুরেই ৪০ হাজার টাকা তুলেছেন। বার বার বলে চলেছেন, ‘‘কী হবে বলুন তো, এতগুলো টাকা নিয়ে করবটা কী? দু’দিন আগে সাবধান করলেও এ ভাবে ভুগতে হতো না।’’

বড়বাজারের আমড়াতলার গলিতে যশকর্ণ রাঠিরও মাথায় হাত! পাইকারির কারবারি বলছেন, ‘‘আমরা তো নগদেই কারবার করি। সংসার খরচের টাকাও বাড়িতে থাকে। এ তো মহা মুশকিলে পড়লাম।’’ মহাত্মা গাঁধী রোডের ক্যুরিয়রের ব্যবসায়ী কৌস্তুভ বসুরও দাবি, ‘‘৫০০ বা ১০০০-এর নোটেই বড়বাজারে ব্যবসা চলে। দুম করে বন্ধ হলে মুশকিল হবে।’’ পোস্তার অজয় কুমার অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। বললেন, ‘‘আমার সব টাকার হিসেব আছে। ব্যাঙ্কে গিয়ে পাইপয়সা ঠিক আদায় করে আসব।’’

মঙ্গলবার রাত ১১.৩০টা পর্যন্ত বিপণি খোলা রাখার কথা ঘোষণা করেছিল বিগ বাজার, সেন্ট্রাল, হোম টাউন, ই-জোন, ব্র্যান্ড ফ্যাক্টরির মতো খুচরো বিপণি সংস্থাগুলিও। কিন্তু বুধবার সকালে বাজারে কী হবে, সেই চিন্তায় খুচরো ব্যবসায়ীরা। এক মাছ ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘যাঁরা আমাদের বাঁধা খদ্দের, তাঁদের না-হয় ধারে জিনিস দিয়ে দেব। কিন্তু যাঁরা চেনা মুখ নন, তাঁদের কাছ থেকে তো নগদ টাকাই নিতে হবে। এবং ১০০র নোটেই নিতে হবে।’’ যে সব মাছ বা সব্জি ব্যবসায়ী পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বিক্রি করেন, তাঁদের চিন্তা, কতটা মাল তুলবেন তাঁরা? খদ্দেররা সবাই কি খুচরোয় দাম দিতে পারবে!

সন্ধেয় যাদবপুরে ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে সওয়ারির তুমুল ঝগড়া। আরোহী ৫০০ টাকার নোট দিতে চাইছেন। ট্যাক্সিচালক অনড়। বলে চলেছেন, ‘‘৫০০র নোট নিয়ে মরি আর কী!’’

৫০০ বা ১০০০ টাকার নোটের মর্যাদা যে আমজনতার চোখে কয়েক মুহূর্তে পাল্টে গিয়েছে, তার নমুনা সোশ্যাল মিডিয়ার বার্তায় স্পষ্ট। ১০০০ টাকার নোট কাগজের মতো মুড়ে চানাচুর খাওয়ার ছবি নিমেষে ভাইরাল। ধর্মতলা এলাকার এক রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে দেখা গেল, রাত ১০টায় অতিথিদের জনে-জনে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড আছে কি না, জানতে চাইছেন। তিনি বললেন, নগদ টাকা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। অগত্যা এ ছাড়া উপায় নেই। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের এক পানশালায় রাতেই নোটিস পড়ে, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট আর চলবে না। ওই তল্লাটের জনৈক কর্মচারীও কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। অন্য দিন খদ্দেররা দু’পাত্তর খাওয়ার পরে নর্তকীদের ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট ছুড়ে দেন। আর তিনি তা কুড়িয়ে রাখেন। নোট নিয়ে নয়া ঘোষণার পরে নোটের তাড়া তিনি না-পারছেন ফেলতে, না-পারছেন গিলতে!

তবে পৌষমাস ডিজিটাল ওয়ালেট সংস্থাগুলির। পেটিএম যেমন গ্রাহকদের এসএমএস পাঠিয়েছে, ওয়ালেটে টাকা ভরে লেনদেন করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন