Election Commission of India

মহিলা বুথ বাড়ানোর নির্দেশে আতান্তরে জেলা প্রশাসন

রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সরকারি কর্মীদের পাশাপাশি মূলত স্কুলশিক্ষিকাদের বুথ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়েছিল।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:০৫
Share:

ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ, রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা ভোটে মহিলা পরিচালিত বুথের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর এতে কার্যত মাথায় হাত পড়েছে জেলা প্রশাসনের। এত মহিলা কর্মী পাওয়া যাবে কোথা থেকে, বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। সম্প্রতি প্রাক্-ভোট পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসেছিল নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। তারা ফিরে যাওয়ার পরেই গত ২১ জানুয়ারি রাজ্যের সব জেলাশাসককে জানিয়ে দেওয়া হয়, মহিলা পরিচালিত বুথের সংখ্যা ২৫ শতাংশ করতে হবে।

Advertisement

নিবার্চন কমিশন সূত্রের খবর, করোনা আবহে বুথের সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনে মোট বুথের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি দাঁড়াবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক তার ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ ২৫ হাজার বুথ হতে হবে মহিলা পরিচালিত। কলকাতা শহর লাগোয়া একটি জেলার জেলাশাসক বলেন, ‘‘প্রতিটি বুথে মোট চার জন ভোটকর্মী প্রয়োজন— এক জন প্রিসাইডিং অফিসার এবং তিন জন পোলিং অফিসার। সে ক্ষেত্রে রাজ্য জুড়ে ২৫ শতাংশ বুথ পরিচালনা করতে প্রায় এক লক্ষ মহিলা কর্মী দরকার।’’

রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সরকারি কর্মীদের পাশাপাশি মূলত স্কুলশিক্ষিকাদের বুথ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের একটা বড় অংশ এই কাজে অনিচ্ছুক হওয়ায় পার্শ্বশিক্ষক এবং সরকারি দফতরের অস্থায়ী মহিলা কর্মীদের বুথ পরিচালনার দায়িত্বে রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা জানান, অঙ্গনওয়াড়ি এবং আশাকর্মীরা ভোটাদের স্যানিটাইজ়ার দেওয়া এবং তাঁদের দেহের তাপমাত্রা মাপার কাজ করবেন। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলাশাসক বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা মাইক্রো অবজ়ার্ভারের দায়িত্বে থাকবেন। ফলে তাঁদের বুথ পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।’’

Advertisement

এক জেলাশাসক বলেন, ‘‘অধিকাংশ স্কুলশিক্ষিকা শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে বুথ পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। সম্প্রতি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে এসেও অনেক শিক্ষিকা নানা কারণ উল্লেখ করে লিখিত ভাবে তাঁদের আপত্তি জানিয়েছেন। ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে অনীহা দেখিয়ে সরাসরি জেলাশাসকদের দফতরেও চিঠি এসেছে।’’

নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিকের কথায়, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের একাধিক জায়গায় সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল। বহু এলাকায় বুথের বাইরে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়তে দেখা গিয়েছিল। শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল বুথ দখলেরও। নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের ধারণা, মূলত সন্ত্রাসের বিষয়টি মাথায় রেখেই বুথ পরিচালনায় রাজি হচ্ছেন না মহিলা কর্মীরা। এর পাশাপাশি আর একটি কারণও অনুমান করছেন তাঁরা। নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী, কোনও একটি এলাকার বাসিন্দাদের আশপাশের এলাকায় বুথ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োগ করার কথা। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটকর্মীদের শাসানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ বারও তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক মহিলা কর্মী। তা ছাড়া, নির্বাচনের পরে তাঁদের ওই এলাকাতেই বসবাস করতে হবে। অনেক মহিলা কর্মীর আশঙ্কা, সে ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভাবে ভোট পরিচালনা করার পরে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের তোপের মুখেও তাঁদের পড়তে হতে পারে।

মহিলা পরিচালিত বুথ সংক্রান্ত এই নির্দেশ জেলাশাসকদের জানানো হয়েছিল গত ২১ জানুয়ারি। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে তার রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্ষন্ত আশাব্যঞ্জক রিপোর্ট আসেনি বলেই রাজ্য নির্বাচন দফতর সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন