এক মহিলা ইন্টার্নের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঠিকাদারের নিয়োগ করা এক সাফাইকর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের বিশ্রামের ঘরে ওই ঘটনায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন ইন্টার্নেরা। তার জেরে শুক্রবার তাঁরা প্রথমে কর্মবিরতির হুমকি দিলেও হাসপাতাল সুপারের আশ্বাসে নিরস্ত হন।
কয়েক দিন আগে কলকাতায় আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে অস্থায়ী লিফটচালকের বিরুদ্ধে। এ বার আক্রান্ত খোদ চিকিৎসকই। ইন্টার্ন ও জুনিয়র চিকিৎসকদের ক্ষোভ, তাঁদের রাতবিরেতে রোগী সামলাতে হয়। কিন্তু সাধারণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল দূরে থাক, মেডিক্যাল কলেজগুলির হাল একের পর এক ঘটনায় তা স্পষ্ট। বর্ধমান মেডিক্যাল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে জরুরি বিভাগে কয়েক জন চিকিৎসক ও ইন্টার্নের সঙ্গে ‘নাইট ডিউটি’ করছিলেন অভিযোগকারিণী। রাত ৩টে নাগাদ একতলার ঘরে বিশ্রাম নিতে যান। তখন সাফাইকর্মী প্রসূন নায়েক ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। হাসপাতাল সুপার এবং ওই ইন্টার্নের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রসূন গ্রেফতার হয়েছে।
এ দিন ইন্টার্নরা দল বেঁধে বর্ধমান মেডিক্যালের সুপার উৎপল দাঁয়ের কাছে গিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানান। রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নিরাপত্তা কী ভাবে আঁটোসাঁটো করা যায়, তা আমরা দেখছি। জেলা প্রশাসনকেও বর্ধমান মেডিক্যালের নিরাপত্তার বিষয় দেখতে বলা হচ্ছে।” সুপার জানান, ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘সুপারের সঙ্গে টেলিফোনে কথাও হয়েছে। আমরা কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
পুলিশ জানায়, ধৃত প্রসূন গত চার বছর হাসাপাতালে কাজ করছেন। বাড়ি বর্ধমানেরই ছোটবেলুন গ্রামে। অভিযোগকারিণী পুলিশকে জানান, ‘‘সাফাইকর্মী ঘরে ঢুকে অভব্য আচরণ করা মাত্র আমি চিৎকার করে বেরিয়ে যাই। সহকর্মী ও অন্যেরা ছুটে এসে ছেলেটিকে ধরে।’’ উৎপলবাবুর দাবি, “ওই সাফাইকর্মী লিখিত ভাবে দোষ স্বীকার করেছে। তাকে অবিলম্বে বহিষ্কার করার জন্য ঠিকাদার সংস্থাকে বলা হয়েছে।”
তবে এতেও আশ্বস্ত নন ইন্টার্নেরা। তাঁদের ক্ষোভ, বর্ধমান ও আশপাশের জেলা, এমনকী ঝাড়খণ্ড থেকে প্রচুর রোগী আসেন। ভিড় সামলাতে ইন্টার্নরা অনেকটাই ভরসা। বিশেষত রােত। অথচ তাঁদের যথেষ্ট নিরাপত্তা নেই। ডাক্তারদের অবস্থা দেখে শঙ্কিত রোগীদের আত্মীয়স্বজনেরাও। চিকিৎসকেরাই যদি সুরক্ষিত না হন, তাঁদের নিরাপত্তা কোথায়? স্বাস্থ্য দফতর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেন, এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।