রামপুরহাট হাসপাতাল

মারধর খেয়ে চাকরি ছাড়তে চান চিকিৎসক

চিকিৎসার গাফিলতিতে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে রামপুরহাট হাসপাতালে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল রোগীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। মার খান জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার হীরককান্তি দাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৭
Share:

প্রহৃত হীরককান্তি দাস। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

চিকিৎসার গাফিলতিতে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে রামপুরহাট হাসপাতালে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল রোগীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। মার খান জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার হীরককান্তি দাস। জামার কলার ধরে টানতে টানতে জরুরি বিভাগ থেকে চার তলার পুরুষ বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় বছর পঁয়তাল্লিশের এই চিকিৎসককে। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

Advertisement

মঙ্গলবারের সকালের এই হামলার পরে ওই ডাক্তারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অনেক হয়েছে! এ দিন তো চিকিৎসা করার পরেও ওরা মারল! হেনস্থা করল! আর ভাল লাগছে না। এ বার চাকরিটাই ছেড়ে দেব।’’ সুস্থ হলেই লিখিত ভাবে হাসপাতাল সুপারের কাছে সে আর্জি রাখবেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি একাধিক হাসপাতালের সুপারদের নবান্নে ডেকে তাঁদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, রোগীর পরিজনদের কাছেও সংযত থাকার আর্জি রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ‘‘ধৈর্য্য হারাবেন না। চিকিৎসকদের উপরে আস্থা রাখুন।’’ তার পরেও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক-নিগ্রহে ইতি পড়েনি। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল, এসএসকেএম বা ন্যাশনাল মেডিক্যাল— ডাক্তারদের উপরে হামলা হয়েছে আকছার।

Advertisement

ডাক্তারদের উপরে চড়াও হওয়ার এই প্রবণতাকে বিপজ্জনক বলে মনে করছেন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস্’ (পশ্চিমবঙ্গ)-এর সম্পাদক গৌতম মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘যে বা যারা এটা করেছে, জামিন-অযোগ্য ধারায় তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। একে তো ডাক্তার নেই, তার উপরে কাউকে এ ভাবে চলে যেতে দেওয়া যায় নাকি!’’ চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএ-এর (ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন) রামপুরহাট শাখার সম্পাদক দেবব্রত দাসও অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলেছেন।

কেন এই কাণ্ড?

এ দিন সকালে মাড়গ্রাম মোড়ে মল্লারপুরগামী একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারের একটি বাড়িতে ধাক্কা মারে। গুরুতর আহত হন বলিরামপ্রসাদ ভকত নামে বছর ষাটেকের এক বৃদ্ধ। সকাল সওয়া ৮টা তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। তখন জরুরি বিভাগের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন হীরককান্তিবাবু। তাঁর দাবি, বৃদ্ধের মুখ থেকে রক্ত উঠছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে স্যালাইন, অক্সিজেন ও ইনজেকশন দেওয়া হয়। চার তলার পুরুষ বিভাগে ভর্তি করে নেওয়া হয়। পরিজনদের জরুরি কিছু ওষুধ কিনে আনতে বলে খবর দেওয়া হয় সার্জেনকে।

মৃতের ছেলে কুন্দনপ্রসাদ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘সার্জেন আসেননি। ঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় বাবা মারা যান।’’ সংশ্লিষ্ট সার্জেন তারাচাঁদ হেমব্রম অবশ্য দাবি করেছেন, ‘কল’ পাওয়ার দশ মিনিটের মধ্যেই আসেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘ততক্ষণে রোগী মারা গিয়েছেন। জরুরি বিভাগে তাণ্ডব শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ একই দাবি হাসপাতালের সুপার সুবোধকুমার মণ্ডলেরও। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে চিকিৎসককে মারধর, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগ জানানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও রাত পর্যন্ত কেউ আটক বা গ্রেফতার হয়নি। হাসপাতালে ভাঙচুর বা ডাক্তারকে মারধরের অভিযোগ মানেননি কুন্দনবাবুরা।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এ দিন গিয়ে দেখা গেল, ছড়িয়ে পড়ে আধভাঙা চেয়ার, টেবিল। মেঝেতে ছড়িয়ে কাচ, স্যালাইনের বোতল, গজ-তুলো। এক পাশে তখনও চলছে রোগী দেখার কাজ। ঘটনার সময়ে হাসপাতালে হাজির ছিলেন রামপুরহাটের পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি। তাঁরও দাবি, ‘‘জরুরি বিভাগের ডাক্তার ওই বৃদ্ধের চিকিৎসায় ত্রুটি করেননি। উনি চাকরি ছেড়ে দিলে রোগীদেরই ক্ষতি।’’

হীরককান্তিবাবু বলছেন, ‘‘বিনা কারণে এতটা অসম্মান করল ওরা। কাজে বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন