ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুজো চলে গিয়েছে কোন ফাঁকে। কালীপুজো-ভাইফোঁটা এসে গেল। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ রাখার ফুরসত নেই ডাক্তারবাবুদের।
সারা দিন রোগীর ভিড়ে নাওয়া-খাওয়ার অবসরটুকু পাচ্ছেন না দেগঙ্গা, বসিরহাট, হাবরা, বাদুড়িয়া, গাইঘাটার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তারই মধ্যে রোগীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, গালিগালাজও হজম করতে হচ্ছে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় কেউ হাতজোড় করে নমস্কার করলে প্রতি-নমস্কারটুকু জানানোর সময় নেই তাঁদের। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে জ্বর আর ডেঙ্গির প্রকোপে এই হাল হয়েছে সরকারি চিকিৎসকদের।
জেলায় সব থেকে বেশি জ্বরের প্রকোপ ছড়িয়েছে দেগঙ্গা ব্লকে। মাস দু’য়েকে মারা গিয়েছেন অনেকে। চিকিৎসা করতে করতে নিজেই জ্বরে পড়েছেন বিএমওএইচ সুরজ সিংহ। ‘‘কালীপুজো-ভাইফোঁটায় ছুটিছাটা...’’ প্রশ্ন পুরোটা না শুনেই জবাব এল, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ছুটি নেওয়া যায়? মাথা খারাপ?’’ কাজ করতে করতে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন গাইঘাটার বিএমওএইচও।
দেগঙ্গার একমাত্র ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে তিনজন চিকিৎসক। কৃষ্ণগোপাল শাসমল, সুজিত রায় ও সামস কামার। হাসপাতাল ছাড়াও ব্লকের ৫টি স্বাস্থ্যশিবিরে হাজার হাজার জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে পালা করে সামলাতে হচ্ছে তাঁদের। সামস বলেন, ‘‘রোজ হাজারের বেশি রোগী দেখতে হচ্ছে। দুপুরে খেতে পর্যন্ত যেতে পারছি না।’’
কলসুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক একা সঞ্চয়ন চন্দ। বললেন, ‘‘বিকেল গড়িয়ে গেলেও রোগীর ভিড় কমছে না। আপ্রাণ চেষ্টা করছি ঠিকঠাক পরিষেবা দেওয়ার।’’ চাকলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক শ্যামল কুণ্ডুর অবস্থাও তথৈবচ। তবে এর মধ্যে অতিরিক্ত দু’জন চিকিৎসক পাঠানো হয়েছে দেগঙ্গায়। তাতেও সামলানো যাচ্ছে না পরিস্থিতি। একই হাল বারাসত জেলা হাসপাতালে। সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘এমন চাপ, এ বছর পুজোটুজোতে ছুটিছাটা নেই চিকিৎসক, কর্মীদের।’’
দিন-রাত এক করে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সুপার শঙ্করলাল ঘোষ। হাসপাতাল থেকে বেরোচ্ছেন রাত ১০টার পরে। ১৯ কিলোমিটার দূরে, গাইঘাটার বাড়িতে ফেরেন মোটরবাইক চালিয়ে। আবার ভোর থেকে হাসপাতালে। সুপার বলেন, ‘‘একজন রোগীকেও বাড়ি পাঠাতে পারলে মনে হচ্ছে মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি।’’ হাসপাতালের সহকর্মীদের পাশে পাচ্ছেন বলেই এই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে, মনে করেন শ্যামলবাবু।