সরকারের ভয়ে দ্বিধায় ডাক্তাররা

প্রবীণ চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, প্যাথোলজিকাল ল্যাবরেটরিগুলি যে কারণে রিপোর্টে ডেঙ্গি লিখতে ভয় পাচ্ছে, ডাক্তাররা ডেথ সার্টিফিকেটে  ডেঙ্গি লিখতে ইতস্তত করছেন, এটাও অনেকটা সেই রকমই।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

জ্বরের রোগীতে উপচে পড়ছে হাসপাতাল, ডাক্তাররা ভিড় সামলাতে হিমসিম। এই অবস্থায় সার্বিক ভাবে চিকিৎসক সংগঠনগুলি কেন আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে না? প্রশ্নটা উঠছে চিকিৎসক মহল থেকেই।

Advertisement

চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ-র ভূমিকাটা এখানে ঠিক কী? কেন তারা সরকারের পাশে দাঁড়াচ্ছে না? সংগঠনের তরফে শান্তনু সেন জানিয়েছেন, সরকারি তরফে তাঁদের কাছে প্রস্তাব এলে তাঁরা তাঁদের সদস্যদের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাবেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কেন সরকারের প্রস্তাব আসার জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা? সেই প্রশ্নের জবাব আইএমএ-র কাছে পাওয়া যায়নি। তবে এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘অনেকেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যেখানে বলেছেন, পরিস্থিতি মোটেই উদ্বেগজনক নয়, সেখানে আগ বাড়িয়ে ক্যাম্প করতে গেলে রাজ্যের পরিস্থিতি যে খারাপ সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হবে। শাসক দল ঘনিষ্ঠ আইএমএ কর্তারা সেই ঝুঁকি নিয়ে নিজেরা বিপদে পড়তে চাইছেন না।’’

নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় যাঁরা ক্যাম্প করে রোগী দেখেন, তাঁদেরও অনেকের বক্তব্য এটাই। তাঁদেরও আশঙ্কা, উপযাচক হয়ে এগিয়ে গেলে তার অর্থ অন্য হতে পারে। প্রবীণ চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, প্যাথোলজিকাল ল্যাবরেটরিগুলি যে কারণে রিপোর্টে ডেঙ্গি লিখতে ভয় পাচ্ছে, ডাক্তাররা ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি লিখতে ইতস্তত করছেন, এটাও অনেকটা সেই রকমই।

Advertisement

লিভার ফাউন্ডেশন-এর কর্ণধার অভিজিৎ চৌধুরীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ক্যাম্পের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা বাড়ানোর উপরে বেশি জোর দিয়েছেন। চিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, তড়িঘড়ি ক্যাম্প করার চেয়ে রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোটাই তাঁর মতে বেশি জরুরি।

তবে সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর তরফে সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা একবার দেগঙ্গায় গিয়েছিলেন। ছোট ক্যাম্পও করেছেন। আগামী সপ্তাহে হাবরার বেশ কিছু অঞ্চলে বড় ক্যাম্পের আয়োজন হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের তরফে আমাদের কিছু বলা হয়নি। আমরাই ভাবছি সরকারের কাছে আবেদন করব যাতে তাঁরা ওষুধ দিয়ে সাহায্য করেন।’’

এ দিকে বৃহস্পতিবারও উত্তর ২৪ পরগনায় চার জনের (মতান্তরে সাত জন) মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে সরকার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ থেকে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের জ্বরের রোগীদের চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এসএসকেএম বাদ দিয়ে কলকাতার চারটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ইন্টার্ন এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিদের তাঁরা বিভিন্ন শিফটে বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন। কারণ সেখানে রোগীর ভিড় প্রবল। আর জেলাগুলির ক্ষেত্রে? উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা, শিলিগুড়িতেও তো পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দেবাশিসবাবু জানান, জেলার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলি থেকে বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে ডাক্তার পাঠানো হচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্যকর্তারা অনেকেই মানছেন, সুপার স্পেশ্যালিটিতে এমনিতেই ডাক্তারের অভাব। সেই পরিস্থিতিতে সেখান থেকে ডাক্তার তুলে নিলে ওই হাসপাতালগুলি কার্যত ডাক্তারশূন্য হয়ে পড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন