চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি থেকে ঘুষ কান্ড— অভিযোগের পসরা সাজিয়ে সিবিআই যখন সকাল বিকেল দরজায় কড়়া নাড়ছে, তখন শুক্রবার তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন তাঁরা যেন ভয় না পান! কেন্দ্রের তদন্ত এজেন্সিকে বিজেপি-র ঘরের নেংটি ইঁদুর আর গুজুবাবুদের (গুজরাতি বাবুদের) সিবিআই বলে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘ভয় পান নাকি? ভয় পাবেন না। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ তিনি কতটা অকুতোভয় তা বোঝাতে নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীদের মঞ্চে উঠে দাঁড়াতে বলেন মমতা। তার পর বলেন, ‘‘এঁদের বিরুদ্ধে কেস হয়েছে তো কী হয়েছে? কিচ্ছু প্রমাণ করতে পারবে না। এঁদের জেলে পুরলে দিল্লিতে-গুজরাতে তার শিকড় বেরোবে।’’
এ দিন মমতাকে ফের ছ’বছরের জন্য দলের সভানেত্রী নির্বাচিত করে তৃণমূল। তবে দলের মূল কৌতূহল ছিল, বিজেপিকে রুখতে মমতা কী মন্ত্র দেন তা নিয়ে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিন মমতার চল্লিশ মিনিটের বক্তৃতার ষোল আনাই জুড়ে ছিল, সিবিআই তদন্ত, জেল এবং বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির প্রসঙ্গ। কখনও তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতায় আছে বলে কোর্টে কেস করে দেবে? কাউকে ম্যানেজ করবে? কাউকে অ্যারেস্ট করবে?’’ কখনও বা বলেন, ‘‘একটা রাজ্যে জিতেছে বলেই জেলের খেল শুরু হয়ে গেল! ওরা কী ভাবছে সব মন্ত্রীকে জেলে পুরে দেবে যাতে তৃণমূলের সরকারই না থাকে।’’ উঠে এসেছে অস্ত্র হাতে গেরুয়া শিবিরের মিছিলের কথা। এবং এই আশঙ্কার কথাও যে বিহার, মহারাষ্ট্র থেকে লোক ঢোকাচ্ছে আরএসএস-বিজেপি। বাংলায় তারা অশান্তি পাকাতে পারে।
তা হলে কী করণীয়? দলকে মমতার দাওয়াই— বুক দিয়ে বুথ আগলাতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আগামী দু’বছর চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিন। ওঁদের ঢুকতে দেবেন না। দরকারে রাত জাগতে হবে।’’ পাশাপাশি, ‘রবীন্দ্রনাথ থেকে বুদ্ধজয়ন্তী’ পালনের নির্দেশ দেন দলকে। কর্মীদের কাছে মমতা জানতে চান, তাঁরা ‘বীরের মতো’ লড়তে পারবেন কিনা! তার পর ভোকাল টনিক দিয়ে বলেন, ‘‘তৃণমূল যখন ছোট ছিল, তখন আগলে রাখতাম। গরু ছাগল না মুড়িয়ে খায়। এখন দল মহীরুহ হয়েছে, খেতে এলে দাঁত ভেঙে যাবে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কেন ইন্ডিয়া টাইগার এলেও কিছু করতে পারবে না।’’
তবে বিরোধীদের দাবি, বোঝা যাচ্ছে মমতা নার্ভাস, উনি ভয় পাচ্ছেন। জেলে যাওয়ার ভয় গিলে খাচ্ছে তৃণমূলকে।
আরও পড়ুন:বামেদের রাম-যাত্রা রোখার ডাক
দলকে কি সত্যিই সাহস জোগাতে পারলেন মমতা? স্টেডিয়ামে এ দিন তেমন ভিড় হয়নি। মমতার বক্তৃতা শেষ হওয়ার আগেই অনেকে চলে যান। সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মমতার আক্রমণাত্মক কথা শুনেও কর্মীদের মধ্যে বিশেষ উদ্দীপনা দেখা যায়নি। দলের একাংশের মতে, উপরের সারির কিছু নেতার দুর্নীতি নিয়ে নিচুতলায় ক্ষোভ রয়েছে। এঁদের বিপদ নিয়ে বহু কর্মীর তাই হেলদোল নেই। অন্য দিকে ভরা হাটের মাঝে মমতা তাঁদের উঠে দাঁড়াতে বলায় নারদ-অভিযুক্তরাও অস্বস্তিতে পড়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী সম্মেলনেই ছিলেন না। ফিরহাদ হাকিম উঠে দাঁড়াননি। এক নেতা বলেন, ‘‘পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে গিয়ে উনি তো বেইজ্জত করলেন। মমতা হয়তো ধরেই নিয়েছেন এঁরা সবাই জেলে যাবেন।’’