সরব: আমডাঙার ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে বামেদের মিছিল ধর্মতলায়। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
রাজ্যে বিরোধী পরিসরে দ্রুত উঠে এসেছে বিজেপি। দলের নেতারা প্রচার চালিয়েছেন, বাংলায় তাঁদের অন্তত এক বার সরকার চালানোর সুযোগ দেওয়া হোক। বিজেপিকে বিঁধেই এ বার জনতার কাছে সিপিএমের পাল্টা আর্জি, ‘বিষ’ চেখে দেখার পরিণাম মারাত্মক হতে পারে!
পঞ্চায়েত নির্বাচন ও বোর্ড গঠনকে ঘিরে সংঘর্ষের জেরে আমডাঙায় টানা কয়েক মাস ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে মঙ্গলবার শহরে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্টের। আমডাঙায় নিহত দুই সিপিএম সমর্থক তৈবুর রহমান ও মুজফ্ফর আহমেদের বাবা মুস্তাফা গায়েন এবং আলিবর্দি খানকে নিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে দরবার করতে যাওয়া হয়েছিল। আবেদন-নিবেদনে কাজ না হলে এর পরে আমডাঙার ঘরছাড়াদের নিয়ে অনির্দিষ্ট কাল পথ অবরোধে যাওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিপিএম নেতারা। শিয়ালদহ থেকে মিছিল শেষে ধর্মতলার সমাবেশে শাসক তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণের পাশাপাশিই বিজেপিকে নিশানা করেছেন তাঁরা।
আমডাঙা থেকে আসা জনতার সামনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, অনেকের ঘরে ফেরা বন্ধ, বাচ্চাদের ( বেশ কিছু স্কুলপড়ুয়া হাজিরও ছিল) স্কুলে যাওয়া বন্ধ, পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হচ্ছে না। অনেকে হয়তো আমডাঙায় গিয়ে বলবে, বামফ্রন্টে থেকে কী হবে? বিজেপিতে আসুন, আগে তো তৃণমূলকে হারাই! তার পরে আবার ফিরে যাবেন! সূর্যবাবুর আবেদন, ‘‘ওই পথে যাবেন না। ওই পথে যারা যায়, তাদের আর ফেরা হয় না!’’
এই সূত্রেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিপর্যয়ের প্রসঙ্গ এনেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তীসগঢ়েই যদি বিজেপি হেরে যায়, বাংলায় তারা আর কী করবে? কিন্তু কেউ কেউ বলবেন, এখানে তাদের সরকারে দেখা হয়নি। এক বার পরীক্ষা করে দেখা যাক। কিন্তু বিষ, ফলিডল চেখে দেখতে যাবেন না! পরিণাম মারাত্মক হবে!’’ ত্রিপুরায় পরিবর্তন ঘটিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে সে রাজ্যে বিজেপি কী করছে, তার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন সূর্যবাবু।
আপাতত আগামী ৮-৯ জানুয়ারির সাধারণ ধর্মঘট ও তার পরে ফেব্রুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশে নজর বামেদের। সেই বিষয়েও সূর্যবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘ওই ধর্মঘটের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়। মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, আপনি চুপচাপ থাকুন। বিজেপির সঙ্গে এই লড়াইটা আমাদের বুঝে নিতে দিন!’’
সুজন চক্রবর্তী, পলাশ দাস, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, তন্ময় ভট্টাচার্য, গার্গী চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়-সহ সব বাম নেতাই আমডাঙার অত্যাচারের ‘কড়া প্রতিরোধে’র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আমডাঙা-কাণ্ডে ১১৪ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান শুনিয়েছেন কী ভাবে আরজিকর হাসপাতাল থেকে তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে আমডাঙা থেকে ‘গ্রেফতার’ দেখানো হয়েছিল। তাঁর দাবি, ‘‘তিনটে পঞ্চায়েতে বোর্ড আমরা গড়বই! রাজ্যের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনের সূচনা আমডাঙা থেকেই হবে।’’