Samik Bhattacharya

‘আর্যভট্ট’ চাইছেন না সভাপতি শমীক! পরিসংখ্যান জানাজানি হওয়া রুখতে বিজেপির বৈঠকে ‘সংখ্যা’ উল্লেখে নিষেধাজ্ঞা জারি

সভাপতিকে বা কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকে সুনির্দিষ্ট তথ্য বা পরিসংখ্যান জানানোর দরকার পড়লে একান্ত বৈঠকে তা জানাতে হবে বলে শমীক নির্দেশ দিয়েছেন। কোনও কর্মসূচির রূপায়ণ ভাল হয়েছে, না কি মাঝারি বা খারাপ হয়েছে, তা বড় বৈঠকে উল্লেখ করা যাবে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:২৮
Share:

বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

অন্দরমহলকে আড়ালে রাখার পর্দা সরে যাচ্ছে বারংবার। ভিতরের পরিসংখ্যান চলে আসছে জনসমক্ষে। সৌজন্যে দলের ‘আর্যভট্ট’রা। অর্থাৎ, দলের অন্দরে সংখ্যা এবং সাংগঠনিক গণিত নিয়ে যাঁদের কারবার। রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য অতএব সটান নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। দলীয় বৈঠকে ‘সংখ্যা’র উল্লেখ এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নির্বাচনী এবং সাংগঠনিক প্রস্তুতির পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য প্রতিপক্ষের হাতে পৌঁছোনো রুখতেই শমীকের এই নিষেধাজ্ঞা বলে বিজেপি সূত্রের বক্তব্য।

Advertisement

সোমবার রাতে বঙ্গ বিজেপির একটি ভার্চুয়াল বৈঠক ছিল। তাতে রাজ্য স্তরের পদাধিকারী এবং জেলা সভাপতিরা ডাক পেয়েছিলেন। নির্বাচনী এবং সাংগঠনিক প্রস্তুতির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন কমিটির সদস্যদেরও ডাকা হয়েছিল। ফলে বৈঠকে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল প্রচুর। বিজেপি সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে বুথ স্তরে বিজেপির প্রস্তুতির স্পষ্ট চিত্র রাজ্য সভাপতিকে বোঝাতে এক পদাধিকারী কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরার চেষ্টা করেন। শমীক তৎক্ষণাৎ ওই পদাধিকারীকে থামিয়ে দিয়ে সটান জানিয়ে দেন, কোনও সংখ্যা বলার প্রয়োজন নেই। দলীয় বৈঠকে এই সব সংখ্যা বা পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা হলেই সে তথ্য দলের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে শমীক বৈঠকে উপস্থিত সকলকে জানান। জানান, সংবাদমাধ্যমের কাছে দলের নানা সমীক্ষা এবং প্রস্তুতির তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে। দলের অন্দরে জমা পড়া যে কোনও রিপোর্টে উল্লিখিত পরিসংখ্যান হুবহু উল্লেখ করে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করছেন। তাই এ ধরনের তথ্য বা সংখ্যা এ বার থেকে আর এত বড় বৈঠকে উল্লেখ করা যাবে না।

শমীক নির্দেশ দিয়েছেন, সভাপতিকে বা কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকে সুনির্দিষ্ট তথ্য বা পরিসংখ্যান জানানোর দরকার পড়লে একান্ত বৈঠকে তা জানাতে হবে। কোনও কর্মসূচির রূপায়ণ ভাল হয়েছে, না কি মাঝারি বা খারাপ হয়েছে, তা বড় বৈঠকে উল্লেখ করা যাবে। কেন ভাল বা খারাপ হল, তার কারণও বিশ্লেষণ করা যাবে। কিন্তু ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিসংখ্যান’ সর্বসমক্ষে প্রকাশ করতে শমীক নিষেধ করেছেন।

Advertisement

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে জনমতের গতিপ্রকৃতি আঁচ করতে বিজেপি ইতিমধ্যেই একাধিক বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে রাজ্য জুড়ে গোটা তিনেক সমীক্ষা করিয়েছে। ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের ক’টিতে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, সমীক্ষাগুলি সেই রিপোর্ট তৈরি করেছে। কতগুলি আসনে হারজিতের ব্যবধান খুব কম হতে পারে, কোথায় কোথায় সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপালে হারকে জয়ে বদলে দেওয়া যাবে, সে সব নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ রয়েছে সমীক্ষাগুলিতে। সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর বাইরে না বেরোলেও সামগ্রিক সংখ্যা কেমন দাঁড়িয়েছে, তা ইতিমধ্যেই জানাজানি হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া গত এক বছরে বিজেপির ‘সদস্যতা অভিযান’, ‘বুথ সশক্তিকরণ’ বা ‘বিএলএ-২’ নিয়োগ, সব ক্ষেত্রেই সংখ্যা সংক্রান্ত খবর বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। বিজেপির প্রাথমিক সদস্য ক’জন হলেন, সক্রিয় সদস্য ক’জন হলেন, কত বুথে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা গেল, কতজন বিএলএ-২ নিয়োগ করা গেল, তারও কিছুই পুরোপুরি গোপন রাখতে পারেনি বিজেপি। নির্বাচন যত কাছে আসবে, নানা তথ্য-পরিসংখ্যানের গুরুত্ব তত বাড়বে। তাই শমীক এখন থেকেই দলে বিধিনিষেধ জারি করে দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, সভাপতি চাইছে না, বিজেপির ‘সক্ষমতা’ বা ‘দুর্বলতা’ সংক্রান্ত বিশদ সংখ্যাতথ্য সর্বসমক্ষে প্রকাশিত হোক!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement