কোর্স মানেই না এমসিআই, পড়ুয়া দুই তৃণমূল চিকিৎসক

এক জন রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি। অন্য জন চিকিৎসক সংগঠনের সম্পাদক। এ রাজ্যে চিকিৎসক সমাজের নীতি নির্ধারক দুই সতীর্থ বিধায়ক এ বার পডুয়ার ভূমিকায়। এবং এমন এক কোর্সে, যাকে এখনও অনুমোদনই দেয়নি মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া!

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায় ও অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪৯
Share:

এক জন রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি। অন্য জন চিকিৎসক সংগঠনের সম্পাদক। এ রাজ্যে চিকিৎসক সমাজের নীতি নির্ধারক দুই সতীর্থ বিধায়ক এ বার পডুয়ার ভূমিকায়। এবং এমন এক কোর্সে, যাকে এখনও অনুমোদনই দেয়নি মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া! শুধু তা-ই নয়। ওঁরা দু’জন, নির্মল মাজি এবং শান্তনু সেন কোর্স-শেষে নিজেদের নামের পাশে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি ব্যবহার করতেও আগ্রহী। যা পুরোপুরি অনৈতিক বলে জানিয়ে দিচ্ছে খোদ এমসিআই!

Advertisement

ওঁরা অবশ্য তাতেও ‘ডোন্ট কেয়ার’। দু’জনেই এ বছর স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রিজেনারেটিভ মেডিসিন অ্যান্ড ট্রানস্লেশনাল সায়েন্স-এ এমফিল করছেন। চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধি হয়েও এমন ‘অনুমোদনহীন’ পাঠ্যক্রমে নাম লেখালেন কী করে?

নির্মলের জবাব, ‘‘আমি কি এমসিআই-এর চাকরি করি নাকি যে, ওদের অনুমোদন নিয়ে মাথা ঘামাব? যত দিন বাঁচি, তত দিন শিখি। তাই শিখছি। আমার পরিবার নেই। বান্ধবী নেই। তাই তাদের সময় দেওয়ারও দায় নেই। সে কারণেই পড়াশোনায় মন দিয়েছি। কারা অনুমোদন দিল, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই।’’

Advertisement

আর শান্তনুর বক্তব্য, ‘‘সরকারি চাকরি করতে তো যাচ্ছি না। এমসিআই অনুমোদিত নয় তো কী হয়েছে, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত তো বটে! আমার শেখার ইচ্ছাটা মরে যায়নি। নিজের জ্ঞান বাড়ানোর জন্য শিখে চলেছি। নতুন কিছু শেখাটা আমার একটা নেশা বলতে পারেন।’’

দুজনেই জানিয়েছেন, এই বিষয়ে এমফিল কোর্স শেষ করার পরে নিজেদের নামের পাশে যোগ্যতা হিসেবে তা উল্লেখ করতে ‘আপত্তি নেই’ তাঁদের। কিন্তু যে পাঠ্যক্রমের কোনও স্বীকৃতিই নেই, তার কথা উল্লেখ করলে কি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হবে না? দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনহীন পাঠ্যক্রমে যোগ গিয়ে চিকিৎসক সমাজের সামনেই বা কী নজির রাখছেন তাঁরা? প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব মেলেনি।

কিন্তু অনুমোদনহীন কোর্সের ডিগ্রি কি তাঁরা নামের পাশে উল্লেখ করতে পারেন? দিল্লিতে এমসিআই-এর এক সদস্য সচিব বলেছেন, ‘‘অনুমোদনহীন কোর্সটি করে কোনও ভাবেই নামের পাশে তা যোগ্যতা হিসেবে উল্লেখ করা যায় না। বিষয়টি পুরোপুরি অনৈতিক।’’

প্রশ্ন উঠেছে, কোন পেশাগত লাভের কারণে আচমকা এমফিল করতে উদ্যোগী হলেন এঁরা? নির্মল মাজি এমবিবিএস পাশ করার পরে গাইনি এবং অবস্টেট্রিক-এ ডিপ্লোমা করেছেন। শান্তনু সেন ডিপ্লোমা করেছেন মেডিক্যাল রেডিও ডায়াগনসিস-এ। এখন এমসিআই-এর অনুমোদনহীন এই পড়াশোনা তাঁদের কী ফল দেবে? নির্মলের বক্তব্য, ‘‘স্টেম সেল নিয়ে গবেষণা করতে চাই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ তো ওটাই।’’ একই সুরে শান্তনুও বলেছেন, ‘‘নিজে জানলে তবে তো অন্যদের জানাব। আইএমএ-র তরফে আমরা কন্টিনিউয়িং মেডিক্যাল এডুকেশন (সিএমই)-এর ব্যবস্থা করি। নিজেও তাই শিখে রাখছি।’’

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, গত পাঁচ বছরে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় বহু মেডিক্যাল কলেজে যত আসন বাড়িয়েছে, তার মধ্যে একটা অংশ বাতিল করে দিয়েছে এমসিআই। পাশাপাশি, এমন বেশ কিছু পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে, যার অনুমোদন পর্যন্ত দেয়নি এমসিআই। তবুও সেই পাঠ্যক্রমগুলি চলছে।

আপাতত স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে এই দুই নয়া পড়ুয়াকে নিয়ে জোর জল্পনা চলছে। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘দুই হেভিওয়েট ছাত্রকে নিয়ে জেরবার হতে হবে আমাদেরই। প্রতি পদে এক জন মনে করেন, অন্য জনকে বোধহয় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে যাচ্ছে। সেই নিয়ে গোলমালের ভয়ে আমাদেরই কাঁটা হয়ে থাকার অবস্থা।’’

দুজনের এমন ‘সম্পর্ক’ অবশ্য নতুন নয়। তৃণমূলপন্থী এই দুই চিকিৎসকের লড়াইয়ে চিকিৎসক সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর নির্বাচন এ বার স্থগিত হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, এঁদের সামলাতে বৈঠক ডাকতে হয়েছে খোদ তৃণমূল নেতা মুকুল রায়কে। লোকে বলে, দু’জনের মধ্যে বাক্যালাপ প্রায় নেই। কোনও অনুষ্ঠানে একসঙ্গে হাজির থাকলে যাতে পরস্পরের মুখদর্শন করতে না হয়, সে জন্য আক্ষরিক অর্থেই অন্য দিকে তাকিয়ে থাকেন দু’জনে। একই ক্লাসের পড়ুয়া হয়ে তাঁরা কী ভাবে বিষয়টি সামলে চলেন, তা নিয়ে এখন আগ্রহ অনেকেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন