Duare Sarkar

বৃহন্নলারা কতটা বঞ্চিত, দেখাল ‘দুয়ারে সরকার’

সরকারি শিবিরগুলিতে তাঁদের দেখা যাচ্ছিল না। তাই ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে আহ্বান জানিয়ে জেলা আধিকারিকেরা ফোন করেন বৃহন্নলাদের।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৪৫
Share:

দুয়ারে সরকার।

দীর্ঘদিন ধরে বিস্তর হইচইয়ের পরে কাগজে-কলমে তাঁদের স্বীকৃতি-সম্মানের ব্যবস্থা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টেরও নির্দেশ, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু ওই শ্রেণির মানুষজন সমাজে এখনও কতটা ‘একঘরে’, চাক্ষুষ করলেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে বীরভূম জেলা প্রশাসন ওঁদের দুর্দশার যে-ছবি দেখেছে, সব জেলাকেই তা জানিয়ে ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য।

Advertisement

সরকারি শিবিরগুলিতে তাঁদের দেখা যাচ্ছিল না। তাই ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে আহ্বান জানিয়ে জেলা আধিকারিকেরা ফোন করেন বৃহন্নলাদের। কিন্তু ফোনটি আদৌ সরকারি, নাকি ভুয়ো— প্রশ্ন তোলে বোলপুরে বৃহন্নলাদের অন্য দল! ঠিক হয়, আধিকারিকেরা সরাসরি গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। অভাব-অভিযোগ বুঝে পদক্ষেপ করা হবে। পরে আধিকারিকেরাই রামপুরহাটে বৃহন্নলাদের পাড়ায় গিয়ে পরিষেবা নিশ্চিত করেন। অফিসার মহলের বক্তব্য, এই অভিজ্ঞতা তাঁদের কাছে নতুন, বৃহন্নলাদের কাছেও বিষয়টি বিস্ময়ের। বীরভূম প্রশাসনের এই পদক্ষেপ সব জেলায় দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন।

জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, সব দফতরের কর্মী-অফিসারেরা রামপুরহাটের বৃহন্নলাপাড়ায় গিয়ে দেখেন, সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা সরকারি পরিষেবার আওতায় বাইরে রয়ে গিয়েছেন। ওই পাড়ার ৩৫-৫৫ বয়সি ১১ জন বৃহন্নলার এক জন বধির, অন্য এক জন মূক ও বধির। তাঁদের প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র নেই। ফলে তাঁরা সরকারের ‘মানবিক’ প্রকল্পের বাইরে। তাঁদের এক জনের আরকেএসওআই-১ এবং দু’জনের আরকেএসওয়াই-২ ডিজিটাল রেশন কার্ড থাকলেও বাকিদের নেই। কেউ কেউ তফসিলি জাতি বা ‘ওবিসি’-তালিকাভুক্ত, কিন্তু জাতি শংসাপত্র না-থাকায় ‘তফসিলি বন্ধু’র মতো প্রকল্পের সুবিধা পান না। স্বাস্থ্যসাথীর আওতার বাইরে সকলেই। আবাস প্রকল্পেও তাঁদের জায়গা হয়নি। এই সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে পরিষেবা নিশ্চিত করছেন আধিকারিকেরা।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সরকারি সুযোগ-সুবিধা যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও পেতে পারেন, সেটা এত দিন সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাসই করানো যায়নি। চির-অবহেলিত এই মানুষগুলির মধ্যে তাই প্রশাসনিক শিবিরে যাওয়ার ইচ্ছা-ভরসা তৈরি হয়নি। ‘‘এ বার সরাসরি দুয়ারে পৌঁছে তাঁদের জড়তা কাটিয়ে পরিষেবা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করব আমরা,” বলেন ওই কর্তা। নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তৃতীয় লিঙ্গ এবং সমাজের বঞ্চিত অংশের মহিলাদের কাছে প্রশাসনকে পৌঁছনোর নির্দেশ দিয়েছেন। এই উদ্দেশ্যে ৮ ডিসেম্বর উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায় বিশেষ শিবির করা হবে। একই ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে।”

রাজ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ক’জন মানুষ আছেন, তার সুনির্দিষ্ট হিসেবই নেই। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই শ্রেণির কমবেশি ১১ হাজার মানুষ ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসেব, রাজ্যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সংখ্যা অন্তত ২০ হাজার। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, প্রকৃত সংখ্যা অজানা বলেই তাঁদের পরিষেবার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।

আধিকারিক মহল জানাচ্ছে, এই কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর থাকতেই পারে। উঠতে পারে নানা প্রশ্ন। তার মধ্যেই এই ধরনের পদক্ষেপে সমাজের বঞ্চিত অংশের সব মানুষকে চিহ্নিত করে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া গেলে সেটাই হবে সব চেয়ে বড় সাফল্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন