Duare sarkar

শনিবার থেকে ‘দুয়ারে সরকার’, সরকারি স্কুলে পিছিয়ে যাচ্ছে পরীক্ষা, কটাক্ষ বিরোধীদের

প্রশাসনের শীর্ষ মহলের নির্দেশে রাজ্য জুড়ে নব পর্যায়ের বুথভিত্তিক দুয়ারে সরকার প্রকল্প শুরু হচ্ছে শনিবারেই। বহু ক্ষেত্রেই সেই শিবির হবে স্থানীয় স্কুলে। তাই পিছোচ্ছে পরীক্ষা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান , চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:০১
Share:

রাজ্য জুড়ে নব পর্যায়ের বুথভিত্তিক দুয়ারে সরকার প্রকল্প শুরু হচ্ছে শনিবারেই। নিজস্ব চিত্র।

দু’টিই রাজ্য সরকারের পৃথক পৃথক দফতরের কাজ। কিন্তু সরকারি কল্যাণ প্রকল্পের কাছে স্কুলের পরীক্ষা হারতে বসেছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে জোরালো ভাবে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশে শনিবার, ১ এপ্রিল স্কুলে স্কুলে প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়নী পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসনের শীর্ষ মহলের নির্দেশে রাজ্য জুড়ে নব পর্যায়ের বুথভিত্তিক দুয়ারে সরকার প্রকল্প শুরু হচ্ছে শনিবারেই। বহু ক্ষেত্রেই সেই শিবির হবে স্থানীয় স্কুলে। তাই পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়ে সরকারি পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠান করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন প্রশাসনের কর্তারা। স্কুলশিক্ষকেরা জানিয়েছেন, ১১ এপ্রিলের মধ্যে সামগ্রিক মূল্যায়ন শেষ করতে বলা হয়েছে। তাই পরীক্ষাসূচি এগিয়ে-পিছিয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে।

Advertisement

রাজনৈতিক শিবির-সহ বিভিন্ন মহলের পর্যবেক্ষণ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দুয়ারে সরকারের মতো কল্যাণ কর্মসূচির পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তা হলে কি পশ্চিমবঙ্গে স্কুলের পরীক্ষার থেকে ভোট-রাজনীতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, প্রশ্ন অবধারিত।

‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘সরকার ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সমন্বয়ের অভাবেই এই সমস্যা। পর্ষদ তো প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়নী পরীক্ষার রুটিন অনেক দিন আগেই দিয়ে দিয়েছে। দুয়ারে সরকার প্রকল্প ঘোষণার আগে সরকার এই দিকটা বিবেচনা করল না কেন?’’

Advertisement

নদিয়ার জেঠিয়া হাইস্কুলের এক শিক্ষক জানান, তাঁদের স্কুলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে একটানা দুয়ারে সরকার প্রকল্প চলবে। তা শেষ হলে পরীক্ষা নেওয়া হবে ১১ এপ্রিলের পরে। পূর্ব বধর্মানের জামালপুর ব্লকের কুলিমগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সোমনাথ সিংহ জানান, তাঁদের স্কুলে শনিবারেই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার পঞ্চায়েত থেকে জানানো হয়েছে, স্কুলে দুয়ারে সরকার হবে শনিবার। সোমনাথ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতকে বলে দিয়েছি, আমি ঘর দিতে পারব না। কারণ আমাদের স্কুলে ক্লাসরুম খুব কম। পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হবে। তখন ওরা আমাদের স্কুলের মাঠে দুয়ারে সরকার করার কথা বলে। কিন্তু তাতেও সমস্যা। কারণ দুয়ারে সরকার প্রকল্পে মাইক বাজানো হয়। স্কুলের মাঠে মাইক বাজালে পরীক্ষা দিতে অসুবিধা হবে পড়ুয়াদের।’’ পানাগড় রেলওয়ে কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাধব চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ৫ এপ্রিল। সে-দিনেই তাঁদের স্কুলে দুয়ারে সরকার হবে বলে জানানো হয়েছে। মাধব বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকার প্রকল্পের জন্য ক্লাসঘর নিয়ে নিলে কী ভাবে পরীক্ষা নেব? তাই প্রথম পরীক্ষাই পিছিয়ে দিতে হল। প্রথম পরীক্ষা হবে একেবারে শেষে।’’

‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতির কথায়, ‘‘রাজ্যের বহু স্কুলেই এই সমস্যা হচ্ছে। ছুটির দিনে অর্থাৎ শনি ও রবিবার দুয়ারে সরকার হলে এই সমস্যা হত না।’’ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও স্কুল থেকে এই সমস্যার কথা আমাদের জানায়নি।’’ ৬ এপ্রিল ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আবার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। সে-দিনেও অনেক স্কুলে পরীক্ষা আছে। তবে মঞ্চের আন্দোলনকারীরা জানান, যে-সব শিক্ষক-শিক্ষিকা পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা পরীক্ষা নেবেন।

পরীক্ষার জটিলতা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা নীরব। তাঁদের পাখির চোখ এখন দুয়ারে সরকারের শিবির। তড়িঘড়ি মানুষের দোরগোড়ায় পরিষেবা পৌঁছে দিতে কোমর বেঁধেছেন তাঁরা। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানান, প্রতিদিন দুয়ারে সরকারের তথ্য জানানো হবে। নিবিড় প্রচার, বিজ্ঞাপন চলছে। কাজে লাগানো হয়েছে লোকপ্রসার শিল্পীদেরও। শিবিরে ৩৩ রকমের পরিষেবা পেতে আবেদন করা যাবে। মূল শিবিরে চিকিৎসা-সহ নানা ধরনের সুবিধা থাকবে। ৪৪ জন বরিষ্ঠ আইএএস অফিসারকে জেলা এবং মহকুমা এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্য স্তরে ১৫টি হেল্পলাইন (১৮০০৩৪৫০১১৭, ০৩৩-২২১৪০৫১২) থাকবে। শিবিরেও সাহায্যকারী দল থাকবে।

প্রশাসনের খবর, ১-২০ এপ্রিল হবে দুয়ারে সরকার। ১-১০ এপ্রিল পরিষেবার আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে। তখন শিবিরের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ। ১১-২০ এপ্রিল হবে পরিষেবা প্রদান। তখনও শিবিরের সংখ্যা হবে প্রায় এক লক্ষ। মোট দু’লক্ষ। এ বার চারটি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিধবা পেনশন, মেধাশ্রী, ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড, বাংলা কৃষি সেচ যোজনার আওতায় ‘মাইক্রো ইরিগেশন’ বা অতিক্ষুদ্র সেচ। শিবিরে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার বাক্সে তালা দেওয়া থাকবে। সেই বাক্স খোলা হবে রাজ্য স্তরে। ব্লকভিত্তিক তথ্য জোগাড় করা হবে। এত দিন জেলার ভিত্তিতে তথ্য নিত রাজ্য প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement