রবিবার রাতে মালদহের জাতীয় সড়কে পুড়ছে বাস। —নিজস্ব চিত্র।
ফের পথ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠলো মালদহ। এ বারের ঘটনাস্থল ইংরেজবাজারের যদুপুর।
রবিবার গভীর রাতে একটি বেসরকারি বাসের ধাক্কা দিয়ে যায় এক মোটরবাইক আরোহীকে। ঘটনার পরিপেক্ষিতে উত্তেজিত জনতাদের একাংশ পুলিশের সামনেই বাসটিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রাখেন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। রাতের দিকে এর জেরে ব্যাপক যানজট হয়। পরে মালদহ থেকে ডিএসপি দীলিপ হাজরার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনাস্থলে দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। আর ওই মোটর বাইক আরোহী জামসেদ আলিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় মালদহ মেডিক্যালে। সোমবার সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, পেশায় ব্যবসায়ী ওই ব্যক্তির বাড়ি ইংরেজবাজারের যদুপুর এলাকাতেই। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।’’
মালদহের মানিকচকে মাসখানেক আগেই বাসের ধাক্কায় এক স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনার পরিপেক্ষিতে স্থানীয় বাসিন্দারা মানিকচকের রাজ্য সড়কের ধারে থাকা অস্থায়ী দোকানগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে হয়েছিল। ঘটনার পরদিনই ফের হবিবপুরে এক স্কুলছাত্রীর পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল এলাকা। বাসে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। ফের ইংরেজবাজারের যদুপুর এলাকায় দুর্ঘটনার পরে বেপরোয়া যান চলাচলকেই দায়ী করছেন বাসিন্দারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার রাত ১২টা নাগাদ ইংরেজবাজার শহর থেকে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন জামসেদ আলি ওরফে রাজু। বাড়ির সামনে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। সেই সময় কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি গামী একটি বেসরকারি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাঁ দিকে গিয়ে তাঁকে ধাক্কা মারে। বাসিন্দারা ছুটে গিয়ে বাসটিকে আটকান। তবে বাসের চালক ও সহকারী চালক পালিয়ে যায়। যাত্রীরাও ভয়ে বাস থেকে নেমে যান। জামসেদকে পরিবারের লোকেরা উদ্ধার করে মেডিক্যালে ভর্তি করান।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জামসেদ পেশায় আম ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর এক ছেলে ফারান আলি নার্সারিতে পড়াশুনা করেন। ঘটনার পর জামসেদের শোকার্ত স্ত্রী হাসনারা বিবি বলেন, ‘‘এখন কীভাবে ছেলে নিয়ে বাঁচব বুঝতে পারছি না।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, জাতীয় সড়ক মেরামত হওয়ার পর দ্রুত গতিতে যান বাহন চলাচল করে। রাতের দিকে সেই গতি আরও বেড়ে যায়। এছাড়া এলাকাতেই জাতীয় সড়কের ধারে একটি হাইস্কুল রয়েছে। তাই দীর্ঘদিন ধরে ব্যারিকেডের দাবি জানানো হয়েছিল। তাতে কোনও কাজ না হওয়ায় বাসিন্দাদের ক্ষোভ আরও বাড়ে বলে অনুমান স্থানীয়দের। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের ইনতিকাব আলি বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে এলাকাতে ব্যারিকেড বসানোর দাবি ফের জানানো হবে।’’ পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, দাবি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।