রাজ্যের আপত্তি, বন্ধ কেন্দ্রের শ্রমিক প্রকল্পও

 ‘আয়ুষ্মান’-এর পরে এ বার রাজ্যের কোপে ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মান-ধন’ প্রকল্পও।

Advertisement

নুরুল আবসার 

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪৮
Share:

রাজ্যের কোপে ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মান-ধন’ প্রকল্পও।—প্রতীকী ছবি।

‘আয়ুষ্মান’-এর পরে এ বার রাজ্যের কোপে ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মান-ধন’ প্রকল্পও।

Advertisement

২৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র দেশের অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য ওই পেনশন প্রকল্প চালু করেছে। যাতে ১৮-৪০ বছর বয়সী শ্রমিকেরা মাসে ১০০ টাকা করে দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে মাসে তিন হাজার টাকা করে পেনশন পাবেন। কেন্দ্রের বিজ্ঞাপন বলছে, ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতে শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে তথ্যমিত্র কেন্দ্রে (কমন সার্ভিস সেন্টার)। অভিযোগ, রাজ্য সরকারের বাধায় তা শুরুতেই ভেস্তে গিয়েছে। তথ্যমিত্র কেন্দ্র থেকে চলা অন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির (অটল পেনশন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জনধন প্রকল্প, পাসপোর্ট ফর্ম জমা নেওয়া, প্যান কার্ড তৈরি ইত্যাদি) ভবিষ্যৎও অন্ধকারে।

‘প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মান-ধন’ প্রকল্প রাজ্যে চালু হয় ১ মার্চ থেকে। তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অধীনে রয়েছে। তবে, এটি আদতে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়। ওই কেন্দ্র থেকে চলা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ যে রাজ্য আর মানবে না তা পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের তত্ত্বাবধানে তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলি চলে। অথচ, এগুলিকে ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকার তার বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচার করছে। রাজ্যের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করছে না। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হবেন। দায় বর্তাবে রাজ্য প্রশাসনের উপরে। কেন্দ্রের এই সব কাজ বরদাস্ত করা হবে না।’’

Advertisement

কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের হয়ে এ রাজ্যে যিনি প্রকল্পটির দেখভালের দায়িত্বে আছেন, সেই অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি। রাজ্য সরকার ভুল বুঝছে। কোনও সমান্তরাল কাজ এখানে হচ্ছে না। আমরা চাই কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকারের পরিষেবা হাত ধরাধরি করে তথ্যমিত্র কেন্দ্রে চলুক। যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ পরিষেবা পান।’’

অভিযোগ, বিভিন্ন ব্লক এবং পঞ্চায়েত কর্মীরা তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলিতে গিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, সেখানে ওই পেনশন প্রকল্প-সহ কেন্দ্রীয় কোনও প্রকল্পের কাজই আর করা যাবে না। হাওড়ার বাগনানের একটি তথ্যমিত্র কেন্দ্রের মালিক বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসনের লোকজন এসে কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে আপত্তি জানান। তবে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়নি। উল্টে আমাকে দিয়ে বলানো হয়, ভবিষ্যতে আর কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ করতে বা মানুষকে বলতে পারব না। আমার পুরো কথা ভিডিও-রেকর্ডিং করা হয়।’’

তবে তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলিতে কাজ বন্ধ থাকলেও জীবনবিমা নিগম, আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং ইএসআই কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেছে। রাজ্যে ইতিমধ্যেই ১৫ হাজারের মতো অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মান-ধন প্রকল্পে বলে আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, কেন্দ্র-বিরোধী সুর তত চড়াচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। মাসকয়েক আগে কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান’ প্রকল্প নিয়েও আপত্তি জানিয়েছিল কেন্দ্র। ওই প্রকল্প এ রাজ্যে বাতিল বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই প্রকল্পেও নাম নথিভুক্ত করার কথা ছিল তথ্যমিত্র কেন্দ্র থেকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে তথ্যমিত্র কেন্দ্র থেকে প্রকল্পটি সরিয়ে নিয়ে সরাসরি উপভোক্তাদের বাড়িতে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement