ফেরার পথে জট, বিদেশিরা জেলেই

মাঝেমধ্যে নাইজেরিয়া, উগান্ডা, জিম্বাবোয়ের অনেক বাসিন্দা ধরা পড়েন। দেশে ফেরার জন্য অর্থের সংস্থান করতেই অনেকটা সময় কেটে যায় তাঁদের। তাই সাজা শেষ হলেও আইনি জটিলতায় দেশে ফিরতে পারছেন না রাজ্যের বিভিন্ন জেলে থাকা বিদেশিরা।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ডাকাতির মামলায় বছর সাতেক আগে গ্রেফতার হন এক পাকিস্তানি যুবক। আইনি পথে অন্য পাঁচ জনের সঙ্গে তাঁরও মুক্তি হয়েছে। সেই অনুযায়ী জেল থেকে বাকিদের ‘ছুটি’ হলেও পাকিস্তানি যুবকটির হয়নি।

Advertisement

কয়েক বছর আগে সীমান্ত পেরোনোর অভিযোগে গ্রেফতার হন মায়ানমারের বছর পঁচিশের এক যুবক। কিন্তু ভোজবাজির মতো পরিচয় বদল ঘটে তিনি হয়ে গেলেন বাংলাদেশি! কেন এমন বদল? কারণ, মায়ানমারবাসী হিসেবে জেল থেকে মুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু কী ভাবে ঘটল পরিচয় বদল? কারাকর্তারা এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। এক কারাকর্তা জানাচ্ছেন, বছর তিনেক ধরে মায়ানমারের ৩৭ জন বাসিন্দা দমদম সেন্ট্রাল জেলে রয়েছেন। বাংলাদেশি হলে জেল থেকে বেরোনোর সম্ভাবনা বা়ড়ে। কেননা দু’-একটি ক্ষেত্র ছাড়া বেশির ভাগ সময়েই সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিদের ‘পুশব্যাক’ করে ফেরত পাঠানো হয়।

মাঝেমধ্যে নাইজেরিয়া, উগান্ডা, জিম্বাবোয়ের অনেক বাসিন্দা ধরা পড়েন। দেশে ফেরার জন্য অর্থের সংস্থান করতেই অনেকটা সময় কেটে যায় তাঁদের। তাই সাজা শেষ হলেও আইনি জটিলতায় দেশে ফিরতে পারছেন না রাজ্যের বিভিন্ন জেলে থাকা বিদেশিরা। কারা দফতর সূত্রের খবর, ‘জান-খালাস’ (সাজা শেষের পরেও যাঁরা জেলে থাকেন) কয়েদি হিসেবে ২৯৪ জন পুরুষ এবং ৮৪ জন মহিলা রয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলে। ‘‘আইন মেনে যত দ্রুত সম্ভব, বিদেশিদের ফেরত পাঠানো হয়,’’ দাবি কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের।

Advertisement

কারাবাসের মেয়াদ শেষের পরেও বিদেশিরা ফিরতে পারেন না কেন? কারা দফতরের ব্যাখ্যা, বিদেশি বন্দির সাজা শেষের পরে ‘ফরেনার রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে কারা দফতর। সেই অফিস সংশ্লিষ্ট দেশকে ওই বন্দির কথা জানায়। সেই দেশ বন্দির নাগরিকত্ব যাচাই করে। তার পরে বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার ছাড়পত্র পায় কারা দফতর। অনেক বন্দির নাগরিকত্বের বিষয়ে নীরব থাকে সংশ্লিষ্ট দেশ। ফলে মেয়াদ ফুরোলেও জেলেই থাকতে হয় সেই ব্যাক্তিকে। কারাকর্তাদের অভিজ্ঞতা, বিশেষত মায়ানমার ও পাকিস্তানের ‘সাধারণ’ বন্দিদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশ দীর্ঘদিন ধরে কোনও জবাবই পাঠায় না।

বিদেশি বন্দি ফেরতের ক্ষেত্রে ‘ডিপোর্টেশন’ তুলনায় সহজ পদ্ধতি। অনেকের ভাষায় তা পুশব্যাক, ঠেলে ফেরত পাঠানো। কোনও বন্দির নাগরিকত্বের প্রমাণ এলে সংশ্লিষ্ট জেল যে-থানার অন্তর্গত, সেখানে জানায় কারা দফতর। সেই থানা যোগাযোগ করে বিএসএফের সঙ্গে। বিএসএফ জেল থেকে সেই বন্দিকে গাড়িতে তুলে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। ওই বন্দি নিজের দেশে চলে যান। এই পদ্ধতি বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। আর ‘রিপ্যাট্রিয়েশন’-এর ক্ষেত্রে বিদেশি বন্দিকে ছাড়তে হয় সংশ্লিষ্ট দেশের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, তাঁর পরিবার এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতিতে। কারাকর্তারা জানাচ্ছেন, সেটা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ। তাই সাজা শেষেও ফিরতে পারেন না বহু জান-খালাস বিদেশি বন্দি।
এই অবস্থায় মুক্তির দিন জানতে কারা-কর্তৃপক্ষের কাছে রোজই ছুটে যান বিদেশি বন্দিরা। কিন্তু ছাড়পত্র আসেনি শুনে পাংশু মুখে ফের দিন গুনতে থাকেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন