নীতির অভাবেই স্কুলে যৌনশিক্ষা দিশাহীন

দিল্লি পরিকল্পনা শুরু করেছে। রাজ্যে অবশ্য একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তবে, পরিকল্পনা রূপায়নের পথ খুঁজে পাওয়া যায়নি। যার জেরে অধিকাংশ স্কুলেই যৌনশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মতভেদ না থাকলেও, কী ভাবে সেটা পড়ুয়াদের বোঝানো হবে তা স্থির করা যাচ্ছে না। তাই প়ড়ুয়াদের মধ্যে যৌন পরিচয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হচ্ছে না বলেই মনে করছেন শিক্ষাজগতের একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১৩
Share:

দিল্লি পরিকল্পনা শুরু করেছে। রাজ্যে অবশ্য একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তবে, পরিকল্পনা রূপায়নের পথ খুঁজে পাওয়া যায়নি। যার জেরে অধিকাংশ স্কুলেই যৌনশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মতভেদ না থাকলেও, কী ভাবে সেটা পড়ুয়াদের বোঝানো হবে তা স্থির করা যাচ্ছে না। তাই প়ড়ুয়াদের মধ্যে যৌন পরিচয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হচ্ছে না বলেই মনে করছেন শিক্ষাজগতের একাংশ।

Advertisement

বছর তেরো আগে স্কুলে যৌন শিক্ষা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিল তৎকালীন রাজ্য সরকার। পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তি হয়েছিল ‘জীবনশৈলী’। বাম জমানার স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী পার্থ দে জানান, যৌন শিক্ষাকে পাঠ্যক্রমেও অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছিল।

পড়ুয়াদের নিয়ে কর্মশালা করা হত। কিন্তু পরে জীবনশৈলীকে বাদ দেওয়া হয়। নতুন সরকারের আমলে যে পাঠ্যক্রম ঠিক হয় সেখানে যৌন শিক্ষার ঠাঁই হয়নি।

Advertisement

স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, স্কুল স্তরে যৌন শিক্ষা জরুরি। রূপান্তরকামী ও সহকামীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু কী ভাবে পড়ুয়াদের সামনে এই পরিচয়গুলো তুলে ধরা হবে, সেটা নির্দিষ্ট না হওয়ায় সমস্যা রয়েছে। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘জনন ও বংশগতি, হরমোন পড়ানো হচ্ছে। যৌন শিক্ষা পড়ালে ক্ষতি নেই। স্পষ্টনীতি থাকলে পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরতে সুবিধা হবে।’’ তাঁর সঙ্গে সহমত গার্ডেনরিচ নুটবিহারী দাস গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, বয়ঃসন্ধিকালে পড়ুয়াদের মধ্যে যৌনতা সম্পর্কে বাড়তি আগ্রহ জন্মায়। তাই পাঠ্যক্রমে যৌন শিক্ষা দরকার।

তবে, তাঁর প্রশ্ন, কীভাবে পড়ুয়াদের এই সংবেদনশীল বিষয় সম্পর্কে জানানো হবে, সে নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। একই প্রশ্ন তুলেছেন হাওড়ার বুড়িখালি ক্ষেত্রমোহন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত জানাও। তাঁর কথায়, ‘‘কীভাবে শিক্ষক পড়ুয়াদের সামনে এই বিষয়গুলি নিয়ে সহজভাবে কথা বলবেন, তার কোনও স্পষ্ট নির্দেশ নেই। ফলে এগুলো নিয়ে কোনও আলোচনা হয় না। যা মানসিক বিকাশেও সমস্যা তৈরি করে।’’

তবে স্কুলে যৌনশিক্ষার বিরোধী পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তাদের সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুল স্তরে যৌনশিক্ষা পড়ুয়াদের মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে পারে। পরিণত বয়সে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় সম্পর্কে জানানো উচিত।’’

মনোরোগ চিকিৎসকেরা কিন্তু যৌনশিক্ষা জরুরি বলেই জানাচ্ছেন। তাঁদের মতে, চারপাশের বদলের সঙ্গে সময়ের আগেই ‘বড়’ হয়ে উঠছে শিশুমন। তাই মনকে পরিণত করতে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষকদের। কীভাবে সেই কাজ করা যায়, সে নিয়ে স্পষ্ট নীতি প্রয়োজন। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘‘টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন দেখেই শিশুদের কৌতুহল তৈরি হয়। বয়ঃসন্ধিকালে সেই আগ্রহ বাড়ে। ব্যক্তিগত এই পছন্দ সম্পর্কে বুঝতে শিখলে পরবর্তীকালে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।’’ আরেক মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেলের কথায়, ‘‘বয়ঃসন্ধিকালেই যৌন শিক্ষা চালু হওয়া ভাল। এটা বিজ্ঞানসম্মতও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন