Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: পুজোয় বাঁধন ছাড়া ভিড়ের পর ‘করোনাশ্রী’ পুরস্কার কে পাবেন, প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকেরা

রাজ্য সরকার ও কলকাতা হাই কোর্ট কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল, কিন্তু পুজোয় প্যান্ডেল ঘোরার আনন্দে মত্ত জনতা সব কিছুই জলাঞ্জলি গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২১ ০৮:০৪
Share:

ফাইল চিত্র।

কেউ পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ মণ্ডপের শিরোপা, কেউ বা আবার ছিনিয়ে নিয়েছেন সেরা প্রতিমার সম্মান। পুজোর মণ্ডপের সামনে স্টেজে সাজানো পুরস্কারের পাশাপাশি কে কাকে কোন বিভাগে টেক্কা দিয়েছেন, তা পোস্ট হতে শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। কিন্তু অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় মণ্ডপের সামনে ভিড় টেনে কে কত করোনা ছড়ালেন, তার বিচার কে করবে? সেখানেও শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন শহরের চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের কথায়, “কোন মণ্ডপে কত মানুষের মাথা জড়ো হল, তার হিসাব-নিকেশ তো অনেক হল। এ বার কোন হাসপাতালে কত রোগী যাচ্ছেন, কত জন শয্যা না পেয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তার হিসেবটা করা প্রয়োজন। আর সেই ঘটনার নেপথ্যে কার ভূমিকা শ্রেষ্ঠ, তারও পুরস্কার হওয়া উচিত।”

Advertisement

রাজ্য সরকার ও কলকাতা হাই কোর্ট কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল, কিন্তু পুজোয় প্যান্ডেল ঘোরার আনন্দে মত্ত জনতার ধাক্কায় সব কিছুই জলাঞ্জলি গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন-পুলিশ কী করছিল? তারা কেন কড়া মনোভাব নিলেন না? আবার এটাও ঠিক যে, প্রতিটি পাড়ার ছোটখাটো পুজোর মণ্ডপের সামনে ভিড় ছিল না। বরং কোথাও কোথাও একটা সময়ের পরে সেখানে এক জনেরও দেখা মিলত না। বদলে নামীদামি নেতাদের আয়োজিত পুজোর মণ্ডপের সামনেই ভিড় ছিল সর্বত্র। আর সেখানে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের কতটা কড়া মনোভাব দেখানো সম্ভব, তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকদের একাংশও।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, মুখে বাঁশি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পুলিশ কর্মীরা। ভিড় কোথাও থমকে গেলেই বেজে উঠছে বাঁশি। শহরের এক সংক্রমণ বিশেষজ্ঞের কথায়, “ওই বাঁশি আদতে করোনার বিপদঘণ্টার প্রতীক। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ সেটা বুঝলেন না। তাই দ্রুত মাস্ক পরার বদলে, কে কত তাড়াতাড়ি পিছনে মণ্ডপকে রেখে নিজস্বী তুলবেন, তাতেই ব্যস্ত হয়েছেন।” আর নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের একাংশ এটাও বলছেন, দর্শনার্থীকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে না দেওয়াই তাঁদের কাজ ছিল। অকারণে ভিড়ের মধ্যে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হতে তাঁরা নারাজ। শহরের এক পুলিশ কর্মীর কথায়, “গত দু’বারে কত পুলিশ কর্মী মারা গিয়েছেন, সেটা তো সকলেই জানেন। তাই এ বারে ভিড় থেকে একটু দূরেই ছিলাম। মানুষ যদি নিজের ভাল না বোঝেন, তা হলে আমরা কী করব!” জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, “এ বারের পুজোয় সব বিধিনিষেধ ভুলে মানুষের লাগামহীন ভাবে উৎসবে মেতে ওঠা, তার সঙ্গে বেশ কিছু পুজো-উদ্যোক্তার নির্লিপ্ত আচরণ মিলেমিশে আমাদের আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।”

Advertisement

অন্য চিকিৎসক ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞরাও জানাচ্ছেন, আগামী দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার বড় আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এবং সেটা স্বাস্থ্য দফতরের কাছেও একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনির্বাণ আরও বলেন, “এই সময়ে উপসর্গ দেখা দিলেই নিজেকে আলাদা করে রাখুন, পরীক্ষা করান ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। কোনও ভাবেই করোনা বিধি পালনে ঢিলেমি চলবে না। আসন্ন তৃতীয় ঢেউ রুখতে হলে সবাইকে বেশি দায়িত্বশীল হতেই হবে।’’

কিন্তু উপসর্গ দেখা দিলেও তাকে মামুলি সর্দি-কাশির আখ্যা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতেও অনীহা দেখাচ্ছেন নাগরিকদের একাংশ। তাই দৈনিক ১৮-২০ হাজার পরীক্ষা হচ্ছে রাজ্যে। তার পরেও শনিবার রাজ্যে পজ়িটিভিটি রেট ২.৩৩ শতাংশ। যা দেখে এক চিকিৎসক বলেন, “এত কম পরীক্ষাতেই সংক্রমণের এই হার। এর থেকে বেশি পরীক্ষা হলে সংক্রমণের হার আরও অনেক বেশি হবে। যদিও কয়েক দিন পরে এই কম পরীক্ষাতেও এমন পজ়িটিভিটি রেট আসবে, যা অকল্পনীয়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন