আন্দোলনের জেরে ব্যাহত বেতন, দাবি ডিভিসি-র

তৃণমূল প্রভাবিত (আইএনটিটিইউসি) শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে তাদের বেতন-প্রক্রিয়া এবং পেনশন দেওয়া নিয়ে সমস্যা হয়েছে—এমনই দাবি করল ডিভিসি। ‘ডিভিসি কামগার সঙ্ঘ’ নামে যে শ্রমিক সংগঠনের দিকে ডিভিসি আঙুল তুলেছে, ঘটনাচক্রে তার সভাপতি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৪
Share:

তৃণমূল প্রভাবিত (আইএনটিটিইউসি) শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে তাদের বেতন-প্রক্রিয়া এবং পেনশন দেওয়া নিয়ে সমস্যা হয়েছে—এমনই দাবি করল ডিভিসি। ‘ডিভিসি কামগার সঙ্ঘ’ নামে যে শ্রমিক সংগঠনের দিকে ডিভিসি আঙুল তুলেছে, ঘটনাচক্রে তার সভাপতি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

ডিভিসি-র অতিরিক্ত সচিব মানবেন্দ্র বিশ্বাস ২৫ জুন বিভিন্ন প্রকল্পের কর্তাদের চিঠি দিয়ে জানান, গত ২২ জুন কলকাতায় ডিভিসি-র সদর দফতরে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখায় ‘ডিভিসি কামগার সঙ্ঘ’। ওই দিন কিছু গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিল ডিভিসি-র। কিন্তু ওই আন্দোলনের জেরে কমার্শিয়াল বিভাগের আধিকারিকেরা দফতরে ঢুকতে পারেননি। ফলে, সেই টাকা জমা নেওয়া যায়নি। এ দিকে, বিভিন্ন সংস্থা থেকে ডিভিসি-র নেওয়া মোটা অঙ্কের দেনার টাকা মেটানোর কথা ছিল জুন মাসেই। ডিভিসি-র কর্মীদের বেতন দিতে মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকা লাগে। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের জুন মাসের বেতন ও অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন দিতে দেরি হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল মানবেন্দ্রবাবুর চিঠিতে।

বাস্তবেও অনেকটা তা-ই হয়েছে। ডিভিসি-র বাঁকুড়ার মেজিয়া, দুর্গাপুর, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর এবং ঝাড়খণ্ডের চন্দ্রপুরা, বোকারো, কোডারমার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেক কর্মী জানিয়েছেন, তাঁরা শনিবার রাত পর্যন্ত এ মাসের দ্বিতীয় দিনেও জুনের বেতন পাননি। যদিও রাতে ডিভিসি-র এক কর্তা দাবি করেন, শুক্রবার বিকেল থেকে পেনশন-প্রাপকদের টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। শনিবার থেকে ধাপে ধাপে বেতন দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

জঙ্গি আন্দোলনে় যাতে রাজ্যের কারখানা অচল না হয়, বারবার তা খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনও কর্মীদের সংযত হতে বলছেন। তবু কেন ২২ জুন ডিভিসি-র সদর দফতর অচল করে দেওয়া হল? কামগার সঙ্ঘের নেতারা জানাচ্ছেন, ২২ জুন তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন কর্মীদের অবিলম্বে পদোন্নতি-সহ বেশ কিছু দাবিতে। বিদ্যুৎমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আমি নিজে ওই দিন আন্দোলন থামিয়েছি। দাবিটা প্রায় বারো বছর ধরে উঠছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক ভাবে দাবি মানার কথা বলেও পরে সরে গিয়েছেন।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘দিল্লিতে ক্ষমতায় বিজেপি। ডিভিসি-তে কর্মী সংগঠনের দখল আইএনটিটিইউসি-র হাতে। তাই কলকাঠি নাড়া চলছে।’’

এখন অসন্তোষের সুযোগে আসরে নেমেছেন ডিভিসি-র সিটু এবং আইএনটিইউসি প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। অবিলম্বে বেতন দেওয়ার দাবিতে ডিভিসি-র বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিটু। মেজিয়ায় আইএনটিইউসি-প্রভাবিত সংগঠন ‘ডিভিসি কর্মচারী সঙ্ঘ’-র সহ-সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “কামগার সঙঘ জঙ্গিপনা ছেড়ে যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করত, তা হলে আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হতো না।” অস্বস্তি এড়াতে পারেননি কামগার সঙ্ঘের মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট সভাপতি তথা শালতোড়ার তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বাউরি। তাঁর দাবি, “আমি কিছু ক্ষণের জন্য গিয়েছিলাম মাত্র।”

তবে কামগার সঙ্ঘের নেতাদের একাংশের দাবি, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয়নি যে ওই তিনশো কোটি টাকা না পাওয়ায় সময়ে বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শোভনদেব বলেছেন, ‘‘এখন প্রায় সব টাকাই অনলাইনে আসে। আন্দোলনের জন্য টাকা জমা না পড়ার যুক্তি টেকে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন