ব্যারাজে বাধা, তাই চরে নেমেই জল-দর্শন

ব্যারাজ থেকে ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ যত বাড়িয়েছে, তত ভিড় জমেছে সেতুতে। রেলিং দিয়ে ঝুঁকে জল দেখা বা নিজস্বী তোলার হিড়িক এমনই ছিল যে, একটা সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছিল পুলিশ।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০৩:২২
Share:

একসঙ্গে: বন্যায় হারিয়েছে সর্বস্ব। তাই আপাতত আশ্রয় ত্রাণশিবিরেই। শুক্রবার বাগনানে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

বেশ একটা মেলা মেলা ভাব। দুর্গাপুর ব্যারাজের এক একটা লকগেট ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে উদ্দাম জলরাশি। তা দেখতে ব্যারাজের উপরে ভিড় আট থেকে আটত্রিশের। আইসক্রিম, ফুচকা, ভুট্টা—সব মিলিয়ে সে এক জমজমাট ছবি।

Advertisement

ব্যারাজ থেকে ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ যত বাড়িয়েছে, তত ভিড় জমেছে সেতুতে। রেলিং দিয়ে ঝুঁকে জল দেখা বা নিজস্বী তোলার হিড়িক এমনই ছিল যে, একটা সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছিল পুলিশ।

শুক্রবার কাউকেই ঘেঁষতে দেয়নি ব্যারাজ পাহারায় থাকা বড়জোড়া থানার পুলিশ। পুলিশকর্মীর সংখ্যাও ছিল দ্বিগুণ। শুধু ট্রাক, লরি, বাস, গাড়ি ও মোটরবাইক ছাড়া হয়েছে। এরই মধ্যে ফাঁক বুঝে সাইকেল আরোহী দুর্গাপুর থেকে বড়জোড়ার দিকে যাওয়ার সময় ব্যারাজের সেতুর মাঝে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ছবি তোলার চেষ্টা করতেই তেড়ে এল পুলিশ।

Advertisement

জনতা অবশ্য উপায় বার করে নিয়েছে। পুলিশের নজর এড়িয়ে ব্যারাজ থেকে বেশ কিছুটা আগে নীচে নেমে সীতারামপুর মানার (চর) পাশে জড়ো হতে শুরু করে লোকজন। সেখান থেকে জল ছাড়ার দৃশ্য দিব্যি দেখা যাচ্ছে। কেউ দামোদরের জলে নেমে পড়েন। ডিএসপি টাউনশিপের যুবক সুবীর বসুর কথায়, ‘‘এমন স্রোত আগে দেখিনি।’’ বেনাচিতির অনামিকা সাহা হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘ব্যারাজে ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই এখান থেকেই দেখছি।’’

আরও পড়ুন: বন্যার ঘাটালে উদ্ধারে ব্যর্থ বায়ুসেনার হেলিকপ্টার

তবে পুলিশের নজর পড়ে যায় সেখানে। বেশিক্ষণ থাকতে দেওয়া হয়নি কাউকেই। নদীর অনেকেটা ভিতরে মাছ ধরছিলেন চরের কিছু বাসিন্দা। বুঝিয়েসুজিয়ে কয়েক জনকে সরানো গেল। এক পুলিশ কর্মী বললেন, ‘‘ওদের ঘরে জল ঢুকে গিয়েছে। রোজগারপাতি বন্ধ। মাছ ধরে দু’পয়সা আয় হচ্ছে। জোর তো করতে পারি না।’’ ব্যারাজের পাশেই ভুট্টা বিক্রি করছিলেন বড় মানার সেনাপতি বাদ্যকর। তাঁরও বাড়ি ডুবেছে দামোদরের জলে। জমির ভুট্টা ছিল নিয়ে বসেছেন দু’পয়সার জন্য।

বৃহস্পতিবার দেদার নিজস্বী তুলে মন ভরে গিয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সায়নী-দেবাদিত্যদের। শুক্রবার গাড়িতে চেপে আরও বন্ধুদের নিয়ে এসেছিল। পুলিশের গুঁতোয় সে আশা পূরণ হয়নি। ব্যাজার মুখে সায়নী বলল ‘‘বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলাম। প্রেস্টিজ পুরো পাংচার হয়ে গেল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন