ছুটির সকালে কাঁপল বাংলা, চলল রঙ্গও

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এ দিনের ভূকম্পের মাত্রা ছিল ৪.৮। উৎসস্থল ছিল বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের সুয়ারাবাকড়া গ্রামে, মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০৩:৫৯
Share:

ভূমিকম্পের জেরে দেওয়ালে ফাটল ধরেছে বলে দাবি করেছেন ছাতনার এক বাসিন্দা। —নিজস্ব চিত্র।

দিন দুয়েক আগে কমল-কম্পনে কেঁপেছিল ভারতভূমি। তার রেশ কাটতে না-কাটতেই রবিবার, ছুটির সকালে আচমকা কেঁপে উঠল বাংলার পশ্চিমাঞ্চল। তবে রাজনৈতিক কম্পন নয়, এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।

Advertisement

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এ দিনের ভূকম্পের মাত্রা ছিল ৪.৮। উৎসস্থল ছিল বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের সুয়ারাবাকড়া গ্রামে, মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এটি তেমন জোরালো কম্পন নয়। রবিবার সকাল ১০টা ৩৯ মিনিট নাগাদ কয়েক সেকেন্ডের এই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতিরও খবর নেই। তবে আচমকা কম্পনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অনেকে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে মাটি কাঁপলেও কলকাতা এবং লাগোয়া তেমন কোনও কম্পন অনুভূত হয়নি। তবে মুর্শিদাবাদের কোনও কোনও অঞ্চলে কম্পন অনুভূত হয়েছে।

খড়্গপুর আইআইটি-র ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রেও এ দিন ভূমির কম্পন ধরা পড়েছে। আইআইটি-র ভূতত্ত্ববিদ-অধ্যাপক শঙ্করকুমার নাথ জানান, ভূমিকম্পের উৎসস্থলের এক দিকে ‘পুরুলিয়া শিয়ার জ়োন’ রয়েছে এবং অন্য দিকে রয়েছে ‘পিংলা ফল্ট’। এই দু’টি ভূস্তরীয় গঠনের মধ্যে নড়াচড়ার ফলেই ভূমিকম্প হয়েছে। ওই এলাকায় এর আগেও হাল্কা ভূমিকম্পের নজির রয়েছে। ‘‘তবে এ দিনের ভূমিকম্পের তীব্রতাও বেশি ছিল না,’’ বলছেন শঙ্করবাবু।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের বিচারে কম্পনের তীব্রতা উল্লেখযোগ্য না-হলেও আকস্মিক ভূমিকম্প সাধারণ মানুষের অনুভূতিতে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ বাড়িঘর কেঁপে ওঠায় অনেকেই আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসেন। বাঁকুড়া শহরের লাগোয়া মিথিলা এলাকার একটি আবাসনের বাসিন্দারা ভূমিকম্পের পরেই ফাঁকা জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নেন। ওই আবাসনের বাসিন্দা মঞ্জু কর্মকার, সোমা নন্দীরা বলেন, “আমরা রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আচমকা রান্নাঘরের বাসনপত্র ঝনঝন করে উঠল। পড়িমরি করে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে যাই।” বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির খবর কিছু পাইনি। তবে রিপোর্ট সংগ্রহের কাজ চলছে।” আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কলকাতা সার্কেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট জে মহেশ্বরী বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গের কিছু এলাকায় আমাদের অধিগৃহীত বেশ কিছু প্রাচীন সৌধ রয়েছে। ভূমিকম্পে সেগুলির ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।’’

একই পরিস্থিতি অন্যান্য জেলায়। আসানসোলের এক কলেজ-শিক্ষিকা সকালে বাড়িতে নিজের গবেষণার কাজকর্ম নিয়ে বসেছিলেন। আচমকা চেয়ার দুলে ওঠে তাঁর। ‘‘গোটা শরীর যেন ঝনঝন করে উঠল। রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,’’ বললেন শিক্ষিকা। বোলপুরের এক প্রবীণ বাসিন্দা সকালের জলখাবার সেরে দোতলায় বসে ছিলেন। রীতিমতো কাঁপুনি টের পেয়েছেন তিনিও।

খাস কলকাতায় অবশ্য তেমন কিছু মালুম হয়নি। তাই তা নিয়েও যেমন রসিকতা হয়েছে, তেমনই ভূমিকম্প নিয়ে হয়েছে রাজনৈতিক তামাশাও। ভূমিকম্পের পরেই ফেসবুকে শুরু হয়ে যায় নানান ঠাট্টা-রসিকতা। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার এক যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘‘আমি তো ফেসবুকে ভূমিকম্প টের পেলাম।’’ কেউ কেউ আবার ঠাট্টাচ্ছলে পশ্চিমাঞ্চলে ভূমিকম্পকে ভোটের ফলাফলের সঙ্গে মিলিয়ে রাজনৈতিক তামাশায় মেতেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন