West Bengal Recruitment Case

রাশি রাশি নগদ টাকা কী ভাবে ‘সাদা’ করতেন পার্থ? ‘ডোনেশন রহস্য ফাঁস’ জামাই কল্যাণময়ের

নিয়োগ মামলার পঞ্চম অতিরিক্ত চার্জশিট সম্প্রতি আদালতে জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। কী ভাবে কোন সংস্থার মাধ্যমে আর্থিক তছরুপ হয়েছে, তাতে পার্থদের ভূমিকা কী, চার্জশিটে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০২
Share:

নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে রাশি রাশি নগদ টাকা উদ্ধার করেছিল ইডি। কী ভাবে ওই বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ‘সাদা’ করা হত, কী কী কৌশল অবলম্বন করতেন পার্থেরা, এ বার সেই তথ্যও জানাল তারা। চার্জশিটে পার্থের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্যের বয়ান তুলে ধরেছে ইডি। তা থেকেই স্পষ্ট হয়েছে, নগদ টাকা নিয়ে কী করতেন পার্থ।

Advertisement

নিয়োগ মামলার পঞ্চম অতিরিক্ত চার্জশিট সম্প্রতি আদালতে জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। কী ভাবে কোন সংস্থার মাধ্যমে আর্থিক তছরুপ হয়েছে, ওই চার্জশিটে তা উল্লেখ করা হয়েছে। কল্যাণময় এই চার্জশিটে অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত। তবে তিনি এখন বিদেশে। তাঁকে একাধিক বার জেরা করে ইডি জানতে পেরেছে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকজনকে নগদে টাকা দিতেন পার্থ। সেই টাকাই আবার ফিরে আসত তাঁর স্ত্রীর নামে তৈরি ট্রাস্টে। এ ভাবে বাবলি চ্যাটার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট দুর্নীতির অন্যতম ‘আঁতুড়ঘর’ হয়ে উঠেছিল। নিয়োগ মামলার চার্জশিটে এমনটাই দাবি করেছে ইডি। তারা জানিয়েছে, পার্থের জামাই কল্যাণময়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। নিয়োগ মামলায় পার্থদের ট্রাস্টের ‘ডোনেশন রহস্য’ও ইডির কাছে ফাঁস করেছেন পার্থের জামাই।

প্রাথমিক ভাবে বাবলি চ্যাটার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট তৈরি করা হয়েছিল পাটুলি এলাকায় একটি পশুচিকিৎসালয় তৈরির উদ্দেশ্যে। কল্যাণময় ওই ট্রাস্টের অন্যতম ট্রাস্টি ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, এক বার ওই ট্রাস্টের জন্য ১ কোটি ১৭ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯১০ টাকা ‘ডোনেশন’ উঠেছিল। একাধিক ব্যক্তি চেকের মাধ্যমে সেই টাকা দিয়েছিলেন। আসলে তার আগে পার্থের কাছ থেকে নগদে টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেই টাকাই ‘ডোনেশন’ দিয়েছেন। তা দিয়ে ১৫ কাঠা জমি কেনা হয়েছিল ২০১৯ সালে।

Advertisement

কল্যাণময় আরও জানিয়েছেন, পার্থের কথাতেই ২০১৭ সালে বোটানিক্স অ্যাগ্রোটেক্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের সংস্থা খুলেছিলেন তিনি। মাছ এবং ধানের ব্যবসা করত ওই সংস্থা। তার নামে একাধিক সম্পত্তি কেনা হয়েছিল। সেই টাকা দিয়েছিলেন পার্থ। সংস্থার ব্যবসায়িক লাভ হিসাবেই সেই টাকা দেখানো হয়েছিল। জামাইকে ১৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন পার্থ, যা দিয়ে বিসিএম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল তৈরি করা হয়। ইডির দাবি, বাবলি চ্যাটার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্টকে দুর্নীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতেন পার্থ। নগদ টাকা ওই ট্রাস্টের ‘ডোনেশনের’ পিছনে আড়াল করতেন। তাঁকে এই কাজে সহায়তা করতেন জামাই কল্যাণময়। টাকা লুকোনোর জন্য একাধিক ভুয়ো সংস্থাও তৈরি করেছিলেন তাঁরা। ওই সমস্ত সংস্থার মালিক হিসাবে রাজীব দে-র নাম ব্যবহার করেছিলেন পার্থ।

বাবলি চ্যাটার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন পার্থের কন্যা সোহিনী চট্টোপাধ্যায়। তবে চার্জশিটে তাঁকে অভিযুক্ত করেনি ইডি। কল্যাণময় এখন বিদেশে।

নিয়োগ মামলায় গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি পার্থ। ২০২২ সালের জুলাই মাসে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে নগদ ৫০ কোটির বেশি টাকা উদ্ধার করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement