সারদা-গার্ডেন্সের দফতরে ইডির অভিযান। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে। নিজস্ব চিত্র
সারদার আঁতুড়ঘরে এ বার হানা দিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেখান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর। এর আগে বোলপুরে সারদার কোপাই রিসর্ট-সহ সারদার বেশ কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন ইডি-র অফিসারেরা।
ইডি-র তদন্তকারীরা বলছেন, তেরো বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থেকে জমির ব্যবসা শুরু করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। পরে অর্থলগ্নি সংস্থার ব্যবসা শুরু করে সেই জমিতে আবাসন তৈরির প্রকল্প দেখিয়েই সারদা রিয়েলটি সংস্থার নামে আমানতকারীদের থেকে টাকা তুলেছিলেন তিনি। সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিষ্ণুপুরের সেই সারদা গার্ডেন্সেই হানা দিয়েছিল ইডি-র একটি দল। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভূমি-রাজস্ব দফতরের অফিসারেরাও।
ইডি সূত্রের খবর, এ দিন বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির মধ্যে কয়েকটি পুকুর, ৩৬ বিঘা জমি এবং ৫০টি নির্মীয়মাণ বাড়ি রয়েছে। সারদার অফিসে থাকা ১৮টি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
ইডি সূত্রের খবর, বিষ্ণুপুরের ভাসা ও বাগী মৌজায় সারদার প্রায় ১১০০ একর জমি রয়েছে। ২০০১ থেকে ওই এলাকায় জমির ব্যবসা শুরু করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি অর্থলগ্নি সংস্থার ব্যবসা শুরু করেন। ইডির এক তদন্তকারীর কথায়, “ওই জমিতে আবাসন তৈরি করে তা বিক্রি করা হবে, এই কারণ দেখিয়ে আমানতকারীদের কাছ থেকে সারদা রিয়েলটি নামে এক কোম্পানি মাধ্যমে টাকা তুলেছিলেন সুদীপ্ত সেন।”
সারদা বন্ধ হওয়ার পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার ভূমি-সংস্কার দফতর সারদা গার্ডেনের জমির বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। সে ক্ষেত্রে ওই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ফের ওই জমির বিষয়ে এ বার তদন্ত শুরু করল ইডি। সেই তদন্তের প্রক্রিয়া হিসেবেই এ দিন ওই সম্পত্তির অনেকটা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ইডি-র তদন্তকারীদের সন্দেহ, সারদা গার্ডেন্সের বেশ কিছু জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সেগুলির অন্য মালিকের নামে মিউটেশনও হয়ে গিয়েছে। সেই জমিগুলিও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে বলে ইডি সূত্রের খবর। ইডি-র এক কর্তা বলেন, “কিছু জমি বিক্রির জন্য টাকা অগ্রিমও নিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। সেগুলিও তদন্তে উঠে এসেছে।”
শুধু জমি বাজেয়াপ্ত নয়, এ দিন সারদা গার্ডেন্সে সুদীপ্ত সেনের অফিসটিও সিল করে দেওয়া হয়েছে। ওই জমি-বাড়ি কেনা-বেচা করা যাবে না বলেও ইডির পক্ষ থেকে একটি নোটিস বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছেন, সারদা গার্ডেন্সের কিছু জমি ও নির্মীয়মাণ বাড়ি অবৈধ ভাবে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে। এই অভিযোগ নিয়ে জমির দাগ নম্বর মিলিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ইডি। জমি-বাড়ি বিক্রির ব্যাপারে কারা জড়িত, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সারদা গার্ডেন্সের পাশাপাশি কলকাতা ময়দানে সারদার অর্থলগ্নি নিয়েও তদন্ত করছে ইডি। সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই কয়েকটি ক্লাবের কর্তাদের ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। এ দিনও কয়েক জন ক্লাবকর্তাকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি দফতরে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইডি-র তদন্তকারীরা জানান, কয়েকটি ক্লাবের দেওয়া হিসেবের নথিতে অসংলগ্নতা ধরা পড়েছে। সেই কারণে ওই ক্লাবকর্তাদের ফের তলব করা হয়েছিল।