ক্লাসঘর ছাড়িয়ে শিক্ষা এ বার পথেঘাটে, মাঠে

আঁকার স্কুলের প্রথম দিনেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ক্লাসরুমের বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলেন রুপোলি পর্দার ‘তারে জমিন পর’-এর নিকুম্ভ স্যার। খোলা আকাশের নীচে মনের আকাশে ডুব দিয়ে খুদে পড়ুয়াদের ইচ্ছেখুশি কিছুমিছু গড়ে তুলতে বলেছিলেন তিনি।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

চার দেওয়ালের বদ্ধতা ছাড়িয়ে গাছের তলায় শিক্ষার আসর এবং আসন পেতেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

Advertisement

আঁকার স্কুলের প্রথম দিনেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ক্লাসরুমের বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলেন রুপোলি পর্দার ‘তারে জমিন পর’-এর নিকুম্ভ স্যার। খোলা আকাশের নীচে মনের আকাশে ডুব দিয়ে খুদে পড়ুয়াদের ইচ্ছেখুশি কিছুমিছু গড়ে তুলতে বলেছিলেন তিনি। বাইরের জগৎই যে প্রশিক্ষণের আসল জায়গা, সেটাই দেখিয়েছিলেন নিকুম্ভ স্যার (ভূমিকায় আমির খান)।

চিরকালের কবি আর সাম্প্রতিক কালের চলচ্ছবির দেখানো সেই পদ্ধতি এ বার সরাসরি প্রয়োগ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। ‘শিক্ষা শুধু ক্লাসে নয়, গোটা সমাজে’— পড়ুয়াদের মধ্যে এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করল রাজ্য শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পরিষদ (এসসিইআরটি)। রাজ্যের সব স্কুলেই খাতায়-কলমে প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পের (প্রজেক্ট) মাধ্যমে হাতেকলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঠ্যবই পড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তির সাহায্যে সমাজের তৃণমূল স্তরের সঙ্গে পড়ুয়াদের যোগাযোগ বাড়ানোর কাজ করবেন শিক্ষকেরা।

Advertisement

এসসিইআরটি-র এক কর্তা জানান, ক্লাসের পাঁচটি করে পড়ুয়াকে নিয়ে এক-একটি দল গঠন করবেন শিক্ষকেরা। ক্লাসের পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রকল্প ঠিক করা হবে। প্রকল্পের বিষয় হতে পারে পরিবেশ দূষণ। একই ভাবে বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটের সমস্যাও থাকতে পারে প্রকল্পের তালিকায়। পুকুরে মাছচাষ থেকে ধানের জমির মানোন্নয়ন, আদিবাসীদের জীবনযাত্রা থেকে গঙ্গাদূষণ— সবই আসবে তাতে। প্রকল্পের সমস্যা এবং তার সমাধানের পথও দেওয়া থাকবে রিপোর্টে। প্রকল্পের স্বার্থে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বা প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্য সংগ্রহের কাজ করবে পড়ুয়ারা। গোটা ঘটনায় নেতৃত্ব দেবেন শিক্ষক। তবে হাতেকলমে সব কিছুই করতে হবে পড়ুয়াদের। এই নিয়ে একটি ফেসবুক পেজ এবং হোয়াটস‌অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছে এসসিইআরটি।

প্রকল্প চলাকালে কোনও ধরনের অসুবিধে বা সমস্যা হলে ওই হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুকে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানান এক কর্তা। প্রকল্প শেষ হলে বাছাই করা কয়েকটি প্রকল্পের রিপোর্ট তুলে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের হাতে। এর ফলে সমাজের নীচের স্তরের যে-কোনও সমস্যা এবং তার সমাধানের পথ দেখাবে পড়ুয়ারাই। এক শিক্ষক বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের ফলে দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি পড়ুয়াদের মধ্যে প্রশিক্ষণের প্রতি ঝোঁকও বাড়বে। পর্যাপ্ত শিক্ষার জন্য যেটা প্রয়োজন।’’

এসসিইআরটি-র অধিকর্তা ছন্দা রায় বলেন, ‘‘সমাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে পড়ুয়াদের মেলবন্ধন ঘটানোই এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। পুথিগত শিক্ষার পাশাপাশি এই ধরনের প্রকল্প নিজের হাতে করলে পড়ুয়াদের মানসিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।’’

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘হাতেকলমে কাজ করার কোনও বিকল্প হয় না। একমাত্র এর ফলেই নিজের দক্ষতা যাচাই করে বাড়ানো যায়। এই ব্যবস্থা শিক্ষার মানোন্নয়নে সহযোগিতা করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন